স্বাগতিক কাতারকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করল ইকুয়েডর। ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচের আগাগোড়া অধিপত্য ছিল লাতিন দেশটির। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই প্রথম কোন স্বাগতিক দল প্রথম ম্যাচে হারের তেতো স্বাদ পেল।
ইকুয়েডর ৪৪, কাতার আছে ৫০ নাম্বারে— ফিফা র্যাংকিংয়ের মানদণ্ডে দুদলকে সমশক্তির মনে হবে। কিন্তু র্যাংকিংটা যে কেবল একটা সংখ্যা মাত্র সেটা পরিষ্কার হল কিক-অফের পরই। চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলা ইকুয়েডর শুরু থেকেই অধিপত্য বিস্তার করে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলা কাতারের ওপর।
কোন বিশ্বকাপ আয়োজক দেশই প্রথম ম্যাচ হারেনি— পরিসংখ্যানটা হয়তো ফেলিক্স সানচেজের শিষ্যদের স্নায়ুর পরীক্ষা নিচ্ছিল। রক্ষণে তিনজন, তাদের সুরক্ষা দিতে মাঝমাঠে পাঁচজন; এমন রক্ষণাত্মক কৌশলের পরও নড়বড়ে মনে হচ্ছিল কাতারকে। দলটির নড়বড়ে অবস্থার বহিঃপ্রকাশ পঞ্চম মিনিটেই। সাদামাটা একটা ক্রস পাঞ্চ করতে ব্যর্থ গোলরক্ষক সাদ আল-শিব এ্যানের ভ্যালেন্সিয়াকে যেন হেডের আমন্ত্রণ জানালেন! সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তুর্কির ক্লাব ফেনারবাচ ফরোয়ার্ড গোলও করলেন। ভিডিও এ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) কল্যাণে এ যাত্রায় বেঁচে যাওয়া কাতারকে ভাগ্যবানই বলতে হবে। অফসাইডের কারণে বাতিল হওয়া এ গোল নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ থাকছে— এমনটা বারবার বলছিলেন ধারাভাষ্যকাররা।
১১ মিনিটে ব্রাইটনে খেলা লেফট ব্যাক প্রেটিস এ্যাস্টুপিনানের বিপজ্জনক ক্রস কর্নারের বিনিময়ে ফেরানো গেছে। দুই মিনিট পর ডানদিক থেকে গঞ্জালো প্লাতার ক্রস বুয়ালেম খাউখি ক্লিয়ার করেন। ১৩ মিনিটে গোলরক্ষক আল-শিব বক্সের মধ্যে ভ্যালেন্সিয়াকে ফেলে দিয়ে পেনাল্টির বিপদ ডেকে আনেন, দেখেন আসরের প্রথম হলুদ কার্ড। স্পট-কিক থেকে গোল করে ইকুয়েডরকে প্রত্যাশিত লিড এনে দেন সাবেক এভারটন ফরোয়ার্ড ভ্যালেন্সিয়া (১-০)। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পেনাল্টি থেকে এলো প্রথম গোলটি। এ গোলের মাধ্যমে বিশ্বকাপ ইতিহাসে ইকুয়েডরের সর্বোচ্চ গোলের মালিক হলেন ৩৩ বছর বয়সি ইকুয়েডরিয়ান। এটি ভ্যালেন্সিয়ার চতুর্থ গোল, আগের সর্বোচ্চ তিন গোল ছিল অগাস্টিন দেলগাদোর।
২৪ মিনিটে উল্লেখ করার মতো আক্রমণ করে স্বাগতিক কাতার; এ প্রচেষ্টা অবশ্য প্রতিপক্ষ দলকে বড় চ্যালেঞ্জর মুখে দাঁড় করাতে পারেনি। ৩১ মিনিটে ডানদিক থেকে বক্সে দারণ এক ক্রস ফেলেন এ্যাঞ্জেলো প্রেসিয়াদো। দুর্দান্ত হেডে বলকে জালে আছড়ে ফেলে আল-বায়েত স্টেডিয়ামের হাজির হওয়া স্বাগতিকদের স্তব্ধ করে দেন সেই ভ্যালেন্সিয়াই (২-০)। ২০১৪ সালে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে এক গোল করা ভ্যালেন্সিয়া হন্ডুরাসের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জয়ে জোড়া গোল করেছিলেন। ইকুয়েডর ২০১৮ বিশ্বকাপ মিস না করলে এ ফরোয়ার্ডের গোলসংখ্যা নিশ্চিতভাবেই বাড়তো।
নড়বড়ে শুরু করা কাতারকে প্রথমার্ধের শেষদিকে আরও ছন্নছাড়া মনে হচ্ছিল। যদিও এসময় আর গোল হজম করতে হয়নি। ওই অবস্থার মাঝেই প্রথমার্ধেরে যোগকরা সময়ে ব্যবধান কমানোর সুযোগ এসেছিল স্বাগতিকদের সামনে। ডানদিক থেকে আল-হায়দোস বক্সে দারুণ ক্রস ফেলেছিলেন। ফাঁকায় থাকা ফরোয়ার্ড আল মোয়েজ-আলীর হেড অবশ্য গোল পোস্টের নিশানার বাইরে দিয়ে যায়। বিরতির পর ৫৫ মিনিটে পরিষ্কার সুযোগ পেয়েছিল ইকুয়েডর। এ যাত্রায় গোলরক্ষক আল-শিব দারুণ দক্ষতায় বিপদমুক্ত করেন। ৬২ মিনিটে কাতারের হাসান আল-হাইদুসের প্রচেষ্টা রুখেদেন ইকুয়েডর গোলরক্ষক গালিন্দেজ। ৭৫ মিনিটে আফিফ প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে পোষ্টে শট নিলেও তা ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। ৮৬ মিনিটে মোহাম্মদ মুনতারির প্রচেষ্টা বাইরে গেলে আরেক দফা হতাশ হন স্বাগতিক দর্শকরা।