23.8 C
Sydney

টপ নিউজসরকার রিজার্ভের টাকা নিয়ে অলস বসে থাকবে না বরং জনদুর্ভোগ লাঘবে ব্যবহার...

সরকার রিজার্ভের টাকা নিয়ে অলস বসে থাকবে না বরং জনদুর্ভোগ লাঘবে ব্যবহার করবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের তারিখঃ

রিজার্ভ নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষ যদি না খেয়ে থাকে রিজার্ভ থেকে কী হবে।

সরকার রিজার্ভের টাকা নিয়ে অলস বসে থাকবে না বরং জনদুর্ভোগ লাঘবে ব্যবহার করবে। তিনি বলেন, ‘রিজার্ভের টাকা নিয়ে অলস বসে থাকা ঠিক হবে না। আমাদের জনগণের ভোগান্তি কমাতে হবে।’

সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) নবনির্বাচিত ৫৯টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের শপথবাক্য পাঠ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের মোট ৬২৩ জন সদস্যও শপথ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হঠাৎ একটা কথা এসেছে রিজার্ভের টাকা নাকি নাই, চুরি হয়ে গেছে। এই চুরি কীভাবে সম্ভব?’ বিএনপির আমল এবং বর্তমানের রিজার্ভের তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রিজার্ভের টাকা খরচ হয়েছে মানুষের কল্যাণে, তাদের প্রয়োজন মেটাতে। একুশ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার রিজার্ভ পেয়েছিল প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের মতো, যেটাকে বাড়িয়ে আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে। আর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে রিজার্ভ যেটা ৫ বিলিয়ন ডলার পেয়েছিল সেটাকে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে। রিজার্ভের টাকা সবসময় খরচ হতে থাকে, এটা রোলিং করে। কিন্তু করোনার সময় আমদানি, রফতানি, যোগাযোগ ও যাতায়াত সবকিছু একরকম বন্ধ ছিল বলেই রিজার্ভ এতটা জমা পড়েছিল। কিন্তু করোনা শেষ হয়ে গেলে আমদানি-রফতানি এমনকি চাষবাসের জন্য মেশিনারিজ ক্রয়ে টাকা ব্যয় করতে হয়। করোনার ভ্যাকসিন ক্রয় এবং বিনামূল্যে টেস্ট করাসহ আনুষঙ্গিক খাতেও অর্থ ব্যয় করতে হয়। এভাবেই এ টাকা ব্যবহার হয়েছে মানুষের কল্যাণে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘করোনা যেতে পারেনি, শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন। প্রতিটি পণ্যের দাম সারা বিশে^ বেড়ে গেছে। চাল, গম, ভোজ্য ও জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে এর পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত দামে ক্রয় করতে হলেও আমরা তো দেশের মানুষকে কষ্ট দিতে পারি না, যেখানে যত দামই লাগুক আমরা কিন্তু কিনে নিয়ে আসছি।’

তিনি বলেন, ‘টিসিবি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি মানুষকে আমরা স্বল্পমূল্যে খাদ্য সরবরাহ করছি। ৫০ লাখ মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করছি। যারা একেবারে অপারগ তাদের বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি। বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবিকার ব্যবস্থাও করছি। সেই সঙ্গে ৮ বিলিয়ন ডলার আলাদাভাবে বিনিয়োগ করেছি। আধুনিক বিমান ক্রয় করেছি। এটা আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়েই করেছি। অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার নিইনি। কারণ সেখানে ধার নিলেও সে টাকা সুদসহ শোধ করতে হতো। সেই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিমান নিয়েছে এবং ২ শতাংশ সুদে সেই টাকা আবার ফেরত দিচ্ছে। ফলে দেশের টাকা দেশেই থাকছে। রফতানি ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়ায় টাকা খরচ হচ্ছে, যাতে আমাদের মানুষরাই লাভবান হচ্ছে। কাজেই টাকা নিয়ে বসে থাকলে হবে না।’

অন্যদিকে করোনার সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর প্রায় সব রাষ্ট্রীয় ও দলীয় কর্মসূচিতে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় সম্প্রতি সরাসরি কর্মসূচিতে অংশ নিতে শুরু করেছেন তিনি। বিশেষ করে গত কয়েক দিনে তিনি বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি ঢাকার বাইরেও কর্মসূচিতে সরাসরি যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক দীর্ঘ বক্তৃতা দিলাম। কারণ অনেক দিন পরে পেলাম তো। বন্দিখানায়ই তো ছিলাম করোনার সময়। প্রায় দুই-আড়াই বছর ওই ভিডিও কনফারেন্সে বাক্সবন্দি। ২০০৭ সালে ছিলাম আসল জেলে। সেই জেল ছিল ছোট। আর করোনার সময় ছিলাম বড় জেলে। কিন্তু সুবিধা এটুকু অন্তত ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেই সুবাদে ভিডিও কনফারেন্স করতে পেরেছি। আজকে একটু মুক্তভাবে আসতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে।’

বিএনপির অপপ্রচারে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির চরিত্রই অপপ্রচার চালানো। এরা নানারকম অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয়। বিএনপির অনেক নেতা মানি লন্ডারিংয়ের কথা বলেন, তারেক রহমানের শাস্তি হয়েছে মানি লন্ডারিং মামলায়। তার বিরুদ্ধে আমেরিকা থেকে এফবিআইয়ের লোক এসে বাংলাদেশে সাক্ষী দিয়ে গেছে। মানি লন্ডারিং কেসে সাত বছর সাজা, ২০ কোটি টাকা জরিমানা আর গ্রেনেড হামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি তার জন্যও সে সাজাপ্রাপ্ত। তাদের নেতাই হচ্ছে খুন, মানি লন্ডারিং ও অবৈধ অস্ত্র চোরাকারবারি মামলার আসামি। আর খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। পলাতক সাজাপ্রাপ্ত আসামি একটা দলের নেতা হয় কী করে? নিজেদের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চেয়ারম্যান করে রেখে দিয়েছে। টাকা পাচার করে তারেক রহমান সাজা পেয়েছে। পাচারকারী কোকো তো মারা গেছে। তারা আবার অর্থ পাচারের কথা বলে কোন মুখে? সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের দল গাল ভরে বলতে পারে।’
খালেদা জিয়ার বোন ও ভাইয়ের অনুরোধে তার সাজা স্থগিত রেখে তাকে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দিয়েছি। আমি তাকে এভাবে যে সুযোগ দিয়েছি কিন্তু সে কী আচরণ করেছে আমার সঙ্গে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জনকল্যাণমূলক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং তার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন যেন নিশ্চিত হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এখানে আপনাদের একটা বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। এলাকায় কী ধরনের অসুবিধা আছে, মানুষের জন্য কী কল্যাণকর কাজ করা যেতে পারে, উন্নয়নের জন্য কী কাজ করতে পারেন-সেটা আপনাদের ভাবতে হবে। সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের দিকেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের লক্ষ রাখার আহ্বান জানান তিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র রয়েছে, অনেক দল রয়েছে। কেউ দল থেকে বা কেউ আলাদাভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে, যখন আপনি ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তখন আপনার দায়িত্ব সবার জন্য। আমি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কে ভোট দিল আর কোন এলাকার ভোটার সেটা দেখিনি। আমি সার্বিকভাবে উন্নয়নের ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রতিটি মানুষ যাতে উন্নয়নের ছোঁয়া পায় সেই ব্যবস্থাই করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ৬১টি জেলা পরিষদে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব খাতের আওতায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা এবং এডিপির আওতায় ৫৪০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছি। সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিচারপ্রাপ্তি সহজ করতে ২৭টি জেলার ১৩৫টি উপজেলার এক হাজার ৮০টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) বাস্তবায়ন করেছে। মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায় সে জন্য আলাদা ফান্ড দিয়ে লিগ্যাল এইড কমিটি করে দিয়েছি। অবকাঠামো উন্নয়ন যেভাবে করা যায় তা করেছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার এই নিয়ে চতুর্থবার ক্ষমতায়। আমরা মানুষের কল্যাণেই কাজ করে যাচ্ছি, এ দেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দিতে। একটি লোকও দরিদ্র, গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। কেউ অশিক্ষার অন্ধকারে থাকবে না। প্রতিটি মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে।’

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম জেলা পরিষদের নির্বাচিত এবং সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

 

সর্বশেষ

spot_img

জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

ডেইলি মার্ক নিউজে জনপ্রিয়

ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অংশগ্রহণে ব্রেমেনে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উদযাপন

মো. নাজিম উদ্দীন, ব্রেমেন প্রতিনিধি: বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা...

উজবেকিস্তানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক স্বার্থে উজবেকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ...

প্রধানমন্ত্রী আগামী সেপ্টেম্বরে ভারত সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে : মোমেন

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী...

অস্ট্রেলিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির কোগরার ফ্রাই রিজার্ভ ও মিন্টুতে আজকের ঈদুল ফিতরের...

ডেইলি মার্ক নিউজে সর্বশেষ
Latest

রোহিঙ্গা বিষয়ে আসিয়ানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সিঙ্গাপুরের প্রতি ঢাকার আহ্বান

পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে টেকসই...

একনেকে ১,২২২.১৪ কোটি টাকার ৪টি প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ মোট চারটি...

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিএনপি’র সমাবেশ শুরু

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত...

মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দলের

বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং...