যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরাইল এবং লেবানন এক ঐতিহাসিক সমুদ্রসীমা চুক্তিতে সই করেছে, যার ফলে দুদেশের জন্যই সমুদ্রের তলদেশের বিরোধপূর্ণ গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস আহরণের পথ খুলে গেল।
বৃহস্পতিবার এই চুক্তিতে সই করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ এবং লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আওন।
গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে বিরোধের কারণে দুদেশের মধ্যে সংঘাত বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ইসরাইল যদি বৈরুতের সম্মতি ছাড়া গ্যাসক্ষেত্রে খনন শুরু করে, লেবাননের হেজবোল্লাহ সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে বলে হুমকি দেয়।
এমন দুটি দেশের মধ্যে এই চুক্তিটি সই হলো, যাদের মধ্যে কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, এমনকি কাগজে-কলমেও নয়, যাদের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।
চুক্তি সইয়ের পর লেবাননের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই চুক্তিকে এক ‘ঐতিহাসিক অগ্রগতি’ বলে বর্ণনা করেছেন। বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকটের মধ্যে পশ্চিমা দেশগুলো যখন গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে, তার মধ্যে দুই বৈরি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এই সমঝোতা হলো।
লেবানন এখন তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, এটি আধুনিককালের সবচেয়ে মারাত্মক সঙ্কট।
লেবানন আশা করছে, সাগরতলের গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস আহরণ করতে পারলে তাদের দুর্দশা কিছুটা লাঘব হবে।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এই চুক্তির ফলে লেবানন এখন তেল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হবে। তবে বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন, লেবাননের পক্ষে দ্রুত গ্যাস আহরণে যাওয়া সম্ভব হবে না, এতে সময় লাগবে।
অন্যদিকে ইসরাইলে নভেম্বরের এক তারিখে সাধারণ নির্বাচন, তার আগে প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদের জন্য এরকম একটি সাফল্য দরকার ছিল।
চুক্তি সই হওয়ার কিছু আগে লাপিদ দাবি করেন, লেবানন যে এরকম একটি চুক্তি করলো, তার মানে তারা ইসরাইলকে কার্যত স্বীকৃতি দিচ্ছে।
তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বলেন, সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত এই চুক্তি রাজনৈতিক বিষয়, এর সঙ্গে ইরাইলের কূটনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই।
চুক্তি সইয়ের পর লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই চুক্তি লেবানন সরকার, জনগণ ও প্রতিরোধকারী শক্তির জন্য বিজয়। একই সঙ্গে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদেরকে তিনি উচ্চ সতর্কতায় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।