টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত জেগে ওঠা মানুষের উত্তাল তরঙ্গে আওয়ামী লীগ ভেসে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কথায় কথায় হুঙ্কার দেবেন, ভয় দেখাবেন, আপনাদের (সরকার) সেই হুঙ্কারে দেশের মানুষ এখন আর ভয় পায় না। মানুষ জেগে উঠেছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত যে উত্তাল তরঙ্গ দেখা যাচ্ছে, এতে আওয়ামী লীগ ভেসে যাবে।’
শনিবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ শহরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে গণসমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। সমাবেশে আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের সব বাধা উপেক্ষা করে এই সমাবেশ প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের মানুষ কোনো বাধা মানবে না। তারা অবশ্যই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বে ইনশাআল্লাহ।
ফখরুল বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন- ‘দেশ যাবে কোন পথে ফয়সালা হবে রাজপথে’। আরেকটি কথা বলেছেন ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’। কেন বলেছেন কোন বাংলাদেশকে ফিরে পেতে চাই আমরা? যে বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তিনি একটি তলাবিহীন ঝুড়ি বাংলাদেশকে তুলে নিয়ে এসে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। বাংলাদেশে যারা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেটাকে বাতিল করে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কত বড় বড় কথা বলে। গণতন্ত্রতো তোমরাই ধ্বংস করেছ বারবার। ৭৫ বাকশাল তৈরি করে ধ্বংস করেছো আবার এখন একনায়কতন্ত্র বাকশাল শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে। জিয়াউর রহমান প্রথম বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছেন। তিনি গার্মেন্টস এর সূচনা করেছিলেন। তিনি শ্রমিক ভাইদের বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন সেখান থেকে এখন রেমিটেন্স আসছে। এখন ওই রেমিটেন্সের টাকা মেরে খাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ একটি ‘চোরের’ দল। এটা আমার কথা নয়, কথা হলো শেখ মুজিবুর রহমানের।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭৪ সালে তখন আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে দুর্ভিক্ষ হলো; আবার সেই দুঃখের কথা তার মেয়েও বলতেছেন। দুর্ভিক্ষের সময় তিনি (শেখ মুজিবুর রহমান) বলেছিলেন আমি কী করবো, আমার তো সব চাটার দল, চোরের দল। এতগুলি কম্বল আসলো বিদেশ থেকে, আমার কম্বলটা গেল কোথায়। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের লোক দুর্নীতি ডাকাতি এটা তাদের মজ্জাগত। এটি আওয়ামী লীগের বডি কেমিস্ট্রিতে আছে, ওখান থেকে তারা বের হতে পারে না। একটি হচ্ছে চুরি, আরেকটি হচ্ছে সন্ত্রাস।
গাইবান্ধা উপনির্বাচনে প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা আমরা পূর্বেই বলেছিলাম, যা গাইবান্ধা উপনির্বাচনে আবার প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনদিন কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
তিনি বলেন, আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলছি এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে তাদের অধীনে নির্বাচনে জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করা হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমানের সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে তাকে দেশে ফিরে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। বিলম্বে সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
মানুষ এখন জেগে উঠছে জেগে উঠবে ইনশাআল্লাহ। সবার প্রচেষ্টায় এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করব এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করব; বলেন বিএনপি মহাসচিব।
জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, চলমান আন্দোলনে ভোলায় নূরে আলম ও আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন, মুন্সীগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন ও যশোরে আব্দুল আলিমসহ পাঁচজনকে হত্যার প্রতিবাদে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে এই গণসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। গত ৬ই অক্টোবর ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি চায় দলটি। তবে প্রশাসন অনুমতি না দিয়ে সমাবেশের জন্য পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্রাবাস মাঠ নির্ধারণ করে দেয়।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদটুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ডাকা সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করেছিলো পুরো শহরে। বন্ধ ছিল পরিবহনব্যবস্থা। দলটির হাজারো নেতাকর্মী গত রাত থেকেই সমাবেশস্থলে উপস্থিত হোন। নৌপথ ও হেটে অংশ নেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।