চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড ময়দানের সমাবেশ দিয়ে শুরু হওয়া সরকার পতনের আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনেই সরকারের পতন ঘটানো হবে। লড়াই করতে হবে, হয় আমরা জিতব নয় আমরা মরব।
কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বিকালে চট্টগ্রামের প্রলোগ্রাউন্ড ময়দানের সমাবেশে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীদের হত্যা ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ গণসমাবেশের আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম বিএনপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গিয়েও আমরা স্বাধীন হতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম স্বাধীনতার জন্য। এখন আবার গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করতে। আবার সেই লড়াই করতে হবে। আমাদেরকে লড়াই করতেই হবে, এ লড়াই জিততেই হবে। এ লড়াইয়ে জিতব না হয় মরব।
ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য আমাদের অনেক ভাই শহীদ হয়েছেন। এ বছরে প্রথম শহীদ হন ছাত্রদলের নুর আলমসহ আরও অনেক। তারা সবাই তরুণ। এরা সাধারণ মানুষ, এরা বিত্তের অধিকারী নয়, বড় ধন সম্পদের মালিক না। এ দেশকে মুক্ত করতে গিয়ে হানাদারের হাতে তাদেরকে জীবন দিতে হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যদি জয়লাভ করতে পারি তবে দেশের স্বাধীনতা থাকবে। আর যদি না পারি তাহলে স্বাধীনতা থাকবে না। আমরা মাথা নিচু করে না, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। জাতিকে এখন অস্তিত্বের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত শাওনের বাবার বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি, “আমি আর কিছু চাই না। আমি এদেশের গণতন্ত্র ফিরে চাই”।
আওয়ামী লীগকে জালিম সরকার উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৪ সালে বিনা ভোটে ১৫১ জনকে এমপি করেছিলেন। আর ২০১৮ সালে রাতের আধারে সব ভোটের বাক্স ভর্তি করেছেন। শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, কিছু লুটেরা এ দেশকে শোষণ করেছে। এরা দেশের সব সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী এজেন্ডার কথা উদ্ধৃতি দিয়ে ফখরুল প্রশ্ন রেখে বলেন, কোথায় দশ টাকার চাল? এখন তো ৭০ টাকা। সবকিছু নিত্যপণ্য মূল্য এখন ৪/৫ গুণ বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আবার নাকি বিদুতের দাম বাড়ানো হবে। পানি গ্যাস বিদ্যুৎ সব কিছুর দাম বাড়ানো হয়েছে। এ দাম বাড়ানোর পেছনে কারণ কি? কারণ একটাই জনগণের পকেট থেকে তারা বিদেশে টাকা পাচার করে। তারা লন্ডনে বাড়ি করে, মালেশিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরি করেছেন। আওয়ামী লীগ বড় গলায় বলে, উন্নয়ন, উন্নয়ন। অথচ আমাদের দেশের মা-মেয়েদের কোনো সম্ভ্রম রক্ষা করা যায় না। দিনে দুপুরে মানুষকে হত্যা করে এরা (আ.লীগ)।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা (র্যাব) শেখ হাসিনার নির্দেশে গুম-খুন করেছে, হত্যা করেছে। মানবাধিকার সংগঠন বলেছে এদেশে কোনো আইন-শৃঙ্খলা নেই। এখানে বিচারবহির্ভূত অনেক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এদেশে কোনো বিচার কার্যক্রম নেই। সারাদেশে বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বলে দিয়েছে। আবার নতুন করে মামলা দেওয়া শুরু করেছে। আজকে সমাবেশে আসতে গিয়ে অনেক বাধা প্রাপ্ত হতে হয়েছে। হুমকি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঠেকাতে পারিনি। উত্তল তরঙ্গে সাম্পান চালিয়া আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ আজ জেগে উঠেছে। তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। মানুষ জেগে ওঠবে। তারা অতি শিগগির জালিম সরকারকে গতি থেকে নামাবে।
নির্বাচন কমিশনারের কথা ডিসি-এসপিরা শোনেন না উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, সে (সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল) নাকি নির্বাচন কমিশনার?
চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড ময়দানের বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণের স্মৃতি টেনে তিনি বলেন, দেশনেত্রী যেদিন এই ময়দানে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেদিন লাখ লাখ জনতা তাকে সম্মান জানিয়েছিলেন, সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু জালিম সরকার তাকে কারান্তরীণ রেখেছে।
‘‘আওয়ামী লীগ কত বড় নিকৃষ্ট হতে পারে, তারা আমাদেরকে হুমকি দিয়ে বলে বেশি কথা বলে খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে ঢোকানো হবে। আরে খালেদা জিয়া তো জেলের ভয় করেন না। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা, সব সাজানো মামলা হয়েছে।’’
বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীরকে স্মরণ করে তিনি বলেন, তাকে নয় বছর ধরে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। এদেশে বিচার বিভাগ বলে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ পুলিশ, বিচার বিভাগ সব কিছু দলীয়করণ করেছে। মিডিয়া পর্যন্ত দলীয়করণ করা হয়েছে। ছাত্রলীগকে সোনার ছেলেদের একটাই কাজ, জনগণের পকেট কাটা ও সন্ত্রাসী করে লুটপাট করে নেওয়া। ছিনতাই চাঁদাবাজি করা। এই হাসিনাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। তার ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।
‘আমি আগেই বলেছি সেভ এক্সিট নেন। পলায়ন করেন। পালান’—সরকারের উদ্দেশে বলেন মির্জা ফখরুল।
বেকারত্ব দূর করার বিষয় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সব সমস্যার সমাধান করে দেশকে উন্নতির দিকে পৌঁছে দেব। আমাদের পরিষ্কার দাবি। যত মিথ্যা মামলা আছে সব প্রত্যাহার করতে হবে। অবিলম্বে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
বূধবার সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে অনেকেই আশেপাশের সড়ক ও বাসাবাড়ির ছাদেও জমায়েত হন।