বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, গুলি করে হত্যা আর সহ্য করা হবে না।
শনিবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মীরকাদিম যুব দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শাওন হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী যুব দলের আয়োজনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
মুন্সিগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মীরকাদিম যুব দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শাওন হত্যার প্রতিবাদে বিকালে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী যুব দলের আয়োজনে
তিনি বলেন, কথায় কথায় গুলি করবেন, জেল দেবেন, আগুন জ্বালিয়ে দেবেন দেশের মানুষ আর তা সহ্য করবে না। দুই শাওনের মৃত্যু আর রহিমের বা নুরে আলমের মৃত্যুতে মানুষের যে আন্দোলন, অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে সেই অভ্যুত্থান দমন করা সম্ভব হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে, যুব দল, ছাত্র দল, স্বেচ্ছাসেবক দল সবাই জেগে উঠেছে। আমি আহবান জানাতে চাই এই দেশকে রক্ষা করবার জন্য, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর কথা বলি না, দেশের জনগণকে ক্ষমতায় বসানোর কথা বলি। কারণ এদেশের মালিক জনগণ।
ফখরুল বলেন, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে একটা দূর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলি। যেই আন্দোলনের মধ্যমে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিষ্কার কথা এখনো সময় আছে আপনারা পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে সংসদ বিলুপ্ত করুন। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটি জনগণের পার্লামেন্ট জনগণের সরকার গঠন করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারকে সরাতে পারলেই আমার সন্তান শহীদুল ইসলাম শাওন, আব্দুর রহিম, নুরে আলম আর শাওন প্রধানের রক্তের প্রতিশোধ নেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে সবাই আরো দৃঢ়তার সঙ্গে বুকের শক্তি নিয়ে বর্জ্য প্রতিরোধ সৃষ্টি করে সামনের দিকে এগিয়ে চলি- সেটাই হবে আমাদের একমাত্র পথ।
মির্জা ফখরুল বলেন, শাওনের শাওনের বাবা বলেছেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তারা আমাদের দেশের মানুষের অধিকারগুলোকে হত্যা করেছে। পিতার কাঁদে সন্তানের লাশ। এর চেয়ে বড়কষ্টের আর কিছু হতে পারে না।
বিএনপির এ নেতা বলেন, সকালে যখন পত্রিকা খুলে বসেছি তখন দেখি শাওনের ৭ মাসের ফুটফুটে বাচ্চা, তার পিতা ও স্ত্রীর ছবি। এসব দেখার পর আর জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার ইচ্ছে হয় না। এখন আমাদের রাজপথে নামতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। এই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর বিএনপির চার সন্তানকে হত্যা করেছে শেখ হাসিনা সরকার।
তিনি বলেন, আজকে রক্ত ঝরিয়ে, হত্যা করে, ভয় দেখিয়ে, গুম করে, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে, মিল-কারখানা পুড়িয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। মুন্সিগঞ্জে শাওনকে হত্যা পর তারা বিএনপির নেতাদের কারখানা জ্বালিয়ে দিয়েছে, বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। গোটা মুন্সিগঞ্জে তারা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।
ফখরুল বলেন, এভাবে তারা সারাদেশে ত্রাস সৃষ্টি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। যারা গত ১৫ বছরে আমাদের ৬শ’ নেতাকর্মীকে গুম করেছে, সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। তারা জাতিসংঘে গিয়ে কোনো মুখে এসব নীতি কথা বলে! অথচ আপনি যে দেশে বসবাস করেন, যে দেশে প্রতিনিধিত্ব করেন সেই দেশে মানুষ হত্যা করছেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীসহ দেশের জনগণের একটা মাত্র অপরাধ। কারণ তারা গণতন্ত্র চায়, তাদের অধিকার ফিরে পেতে চায়, ভোটাধিকার চায়, ভালোভাবে বেঁচে থাকতে চায়, সাধারণ জীবন যাপন করতে চায়, রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসন এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ চায়। অথচ মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নার সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, সাইফুল আলম নিরব, যুব দলের মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মওলা শাহিন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।