চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) কমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। বাংলাদেশের সার্বিক দিক বিবেচনা করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এই আভাস দিয়েছে।
বিভিন্ন কারণে চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তবে বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতি এবং স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের ভোগ-চাহিদা কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরে গত বছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি কম হবে।
বুধবার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। এ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এ সময়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এডিবির সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুন চ্যাঙ হং। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও জ্বালানি ঘাটতির কারণে বেসরকারি বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি কম হবে। সে কারণেই চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমে এবার ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে।
আর মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। খাদ্য সরবরাহ ব্যহত হচ্ছে। ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের আমদানি খরচ বেড়েছে। অনেক দেশে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৈরি অঅবহাওয়ার কারণে অনেক দেশে খাদ্য উৎপাদন কম হয়েছে। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তাই সব মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, গত অর্থবছরের ৬ দশমিক ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে।’
প্রতিবেদনে গত অর্থবছরে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ক্যারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি প্রসঙ্গে বলা হয়, আমদানি কম এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চলতি হিসাবের ঘাটতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির ৪ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এডিমন গিন্টিং বলেন, ‘দুই বছরের কোভিড-১৯ এর ধাক্কার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে সংকটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলে সেটা খুবই সন্তোষজনক। বাংলাদেশ অতীতেও নানা ধরনের সংকট সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বাড়ছে। উদ্বেগের বিষয় ছিল আমদানি, সেটা কমতে শুরু করেছে। তাই সবমিলিয়ে বলা যায় বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে।’
গিন্টিং বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় এবং জ্বালানি সংকটের কারণে এ বছর কাঙ্ক্ষিত হারে বিনিয়োগ হবে না। ধীরগতি দেখা দেবে সরকারি বিনিয়োগেও। এ অবস্থায় রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকারকে জোর দিতে হবে। তবে রপ্তানি আয়ে বৈচিত্র্য আসছে। কৃষি ও ওষুধ খাতে বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি হচ্ছে। প্রবাসী আয়ও বাড়ছে।’
উল্লেখ্য, সরকার চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। আর গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় বাংলাদেশে। আর গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নতুন চ্যালেঞ্জ বলে এডিবি জানিয়েছে।