প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে চার দিনের সরকারি সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার ঢাকা ও নয়াদিল্লীর মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্বাক্ষর (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে তিনি এ সফর করছেন। উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়।
স্মারকগুলো হলো- অভিন্ন সীমান্ত নদী কুশিয়ারা থেকে ভারত ও বাংলাদেশের পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত সরকারের জল শক্তি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, ভারতে বাংলাদেশের রেলওয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ভারতের রেল মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য এফওআইএস ও অন্যান্য আইটি এপ্লিকেশনের মতো আইটি সিস্টেমে সহযোগিতার জন্য ভারতের রেল মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
অন্যান্য সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে- ভারতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল অফিসারদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচির বিষয়ে ভারতের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতার বিষয়ে ভারতের কাউন্সিল ফর সাইন্টিফিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) ও বাংলাদেশের কাউন্সিল অব সাইন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্টিয়াল রিসার্চ (বিসিএসআইআর) এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক, মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এবং প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এর মধ্যে সম্প্রচার সহযোগিতা সংক্রান্ত স্মারক।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় তাঁদের মধ্যকার আলোচনায় নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে সহযোগিতা, অভিন্ন নদীগুলোর পানি বন্টন, রোহিঙ্গা, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক ও মানবপাচার মোকাবিলার মতো পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো প্রাধান্য পায়।
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার নিকটতম প্রতিবেশী দেশ দুটি এই সংকটগুলো কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা করেছে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে, দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটি একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, শেখ হাসিনা হায়দরাবাদ হাউসে পৌঁছলে নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেখানে গার্ড অব অনারও প্রদান করা হয়। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়।
এ উপলক্ষ্যে ভিডিও ক্লিপে মৈত্রী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপসা সেতু, সড়ক নির্মান যন্ত্রপাতি ও মেশিনারী সরবরাহ, খুলনা-দর্শনা রেলওয়ে লাইন এবং পার্বতীপুর কাউনিয়া রেলওয়ে লাইন প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর একটি বই নরেদ্র মোদীর কাছে হস্তান্তর করেন। ভারতে বাংলাদেশ হাই কমিশন বইটি প্রকাশ করেছে।
শেখ হাসিনা তাঁর সম্মানে হায়দরাবাদ হাউসে নরেন্দ্র মোদি আয়োজিত একটি মধ্যাহ্নভোজনেও অংশ গ্রহন করেন।
বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার মাধ্যমে মাধ্যমে ভারতে তাঁর চার দিনের সফরের দ্বিতীয় দিন শুরু করেন। এ সময় নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানান।
রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে শেখ হাসিনা রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে যান। সেখানে তিনি এই মহান ভারতীয় নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সাথে মঙ্গলবার বিকেলে শেখ হাসিনা পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে।
ভারত সফরের প্রথম দিনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শংকর আইটিসি মৌর্য্য হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর স্যুইটের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা জিয়ারত করেন এবং নফল নামাজ আদায়, ফাতিহা পাঠ ও মুনাজাত করেন।
সূত্র বাসস