প্রায় দুই যুগ ধরে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে যুগপৎ আন্দোলন করা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ অবশেষে ‘একলা চলো’ নীতিতে চলার সিদ্ধান্তের কথা জানাল।
গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান জানালেন, বিএনপির সঙ্গে তাদের আর জোট নেই। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করেই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দাবি জামায়াত আমিরের।
এদিকে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ভিডিওতে এমন বক্তব্য দিলেও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে জামায়াত আমিরের বক্তব্য। দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানোর কারণে আমিরকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। কেউ কেউ আরও আগে জোট ছাড়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করছেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিএনপি অনেকটা চুপচাপ। তাদের নেতাকর্মীরা এ নিয়ে তেমন কথা বলছেন না। এমনকি শীর্ষ নেতারাও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে খুব একটা আগ্রহী নন।
জামায়াত আমিরের এমন বক্তব্য নিয়ে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার টেলিফোন করলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। আর স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনিনি। এ বিষয়ে কোনো ধারণাও নেই। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করাও ঠিক হবে না।’
এদিকে জামায়াত আমিরের বক্তব্য ঠিক কবে কোন অনুষ্ঠানে দেওয়া তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে একটি সূত্র বলছে, শনিবার রাতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে তিনি এমন বক্তব্য রেখেছেন।
১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের তৎকালীন আমির গোলাম আযম এবং ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আজিজুল হককে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর থেকে সম্পর্কের টানাপোড়েন, অভিমানে জামায়াতের জোটের বৈঠক বর্জন করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বিএনপির কিছু কিছু নেতা বিভিন্ন সময় জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্যও দিয়েছেন। কিন্তু জামায়াতের পক্ষ থেকে এ নিয়ে এতদিন কেউ মুখ খোলেননি। এই প্রথম দলের শীর্ষ ব্যক্তি আমির ডা. শফিকুর রহমান ঘরোয়া একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে জোটের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরলেন।
জামায়াত আমিরের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এতদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম। ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন কিছু হয়ে গেছে নাকি? আমি বলি হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিল।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। সেটা আর ফিরে আসেনি।’ বছরের পর বছর পর এই ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না- এমন দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই জোটের সঙ্গে বিভিন্ন দল যারা আছেন, বিশেষ করে প্রধান দলের (বিএনপি) এই জোটকে কার্যকর করার কোনো চিন্তা নাই। বিষয়টা আমাদের কাছে স্পষ্ট দিবালোকের মতো এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাস্তবতা হচ্ছে নিজস্ব অবস্থান থেকে আল্লাহর ওপর ভর করে পথ চলা। তবে হ্যাঁ জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ।’
বিএনপির সঙ্গে জোট ছাড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি, এর সাথে তারা ঐক্যমত পোষণ করেছে। তারা আর কোনো জোট করবে না। এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবো। যদি আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করেন তাহলে আমাদের আগামী দিনগুলোতে কঠিন প্রস্তুতি নিতে হবে এবং অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। দোয়া করেন, এসকল ত্যাগ যেন আল্লাহর দরবারে মঙ্গলজনক হয়। এ ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ পাক যেন আমাদের পবিত্র একটি দেশ দান করে। যে দেশটা কোরআনের আইনে পরিচালিত হবে।’
‘শরিয়াহ আইন মানেন না’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেওয়া এই বক্তব্যেরও তীব্র সমালোচনা করেন জামায়াত আমির।