মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভিযানে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের পঞ্চম বার্ষিকীতে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেছেন। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
তিনি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ও বিস্তৃত মানবিক প্রতিক্রিয়ার একটি অপরিহার্য উপাদান হিসাবে আমরা বাংলাদেশসহ এই অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার জন্য কাজ করছি, যাতে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের জীবন পুনর্গঠন করতে পারে।’
কবে থেকে রোহিঙ্গাদের যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হবে কিংবা তাদের সংখ্যা কত হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানাননি ব্লিঙ্কেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পাঁচ বছর আগে, বার্মার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে একটি নৃশংস অভিযান শুরু করেছিল– গ্রামগুলো ধ্বংস করে, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং বৃহৎ আকারের সহিংসতা ঘটিয়েছিল, হাজার হাজার রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী এবং শিশুকে হত্যা করেছিল। ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এই বছরের মার্চ মাসে, আমি যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে বক্তৃতা করেছিলাম, যেটি প্রমাণ করে যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বার্মিজ সেনাবাহিনীর নৃশংসতা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যা সংঘটনের পর্যায়ে পড়ে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে, একই সামরিক বাহিনী বার্মার গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎকে নিভিয়ে দেওয়ার নির্মম প্রচেষ্টায় বার্মার জনগণকে দমন, নির্যাতন এবং হত্যা করে যাচ্ছে। গণতন্ত্রপন্থি এবং বিরোধী নেতাদের শাসকগোষ্ঠীর সাম্প্রতিক মৃত্যুদণ্ড বার্মিজ জনগণের জীবনের প্রতি সেনাবাহিনীর চরম অবহেলার সর্বশেষ উদাহরণ মাত্র। এর সহিংসতার বৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান মানবিক পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে, বিশেষ করে রোহিঙ্গাসহ জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য, যারা দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়ে গেছে।
রোহিঙ্গাদের প্রতি মার্কিন সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের ও বার্মার (মিয়ানমার) জনগণকে তাদের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের জন্য প্রচেষ্টা, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি এবং বার্মার সব ব্যক্তির মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদা রক্ষায় সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’
রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের গণহত্যার বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার প্রতিও সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা ও বার্মার জনগণের জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার অগ্রগতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে এবং নির্যাতিত ও বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে যে মামলাটি গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বার্মার বিরুদ্ধে এনেছে এবং বার্মিজ সামরিক বাহিনীর নৃশংসতা অপরাধের বিচারের জন্য বিশ্বজুড়ে আস্থাভাজন যেসব আদালতের বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে তাদের স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানানো আমরা অব্যাহত রাখছি।