দুর্নীতি মামলায় মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ১২ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তাকে ২১০ মিলিয়ন রিঙ্গিত জরিমানা করা হয়েছে। নাজিবের বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগের প্রতিটি প্রমাণিত হওয়ায় মঙ্গলবার আদালত এ রায় দেন।
মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে কুয়ালালামপুর হাইকোর্টের বিচারক মোহাম্মদ নাজিম মোহাম্মদ গাজ্জালি বলেন, প্রসিকিউশন সব অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সাত ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি মামলার শুনানিতে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করেছিলেন।
এদিকে রায় ঘোষণার পর নাজিব সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করে। দিনভর আদালত প্রাঙ্গণে ছিলেন তার সমর্থকরা। মিটিং ও প্রতিবাদ মিছিল করতে দেখা গেছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে নাজিব রাজাক আপিল করার পরপরই আদালত তা নাকচ করে দেন।
২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় নতুন অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ (ওয়ানএমডিবি) তহবিলটি গঠন করা হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৫ সালে ব্যাংক ও শেয়ারহোল্ডারদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে এ তহবিলের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করে, এ তহবিল থেকে প্রায় ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার অবৈধভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে আর ব্যক্তিগত হিসাবে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব অর্থ বিলাসবহুল বাড়ি, বিমান, দামি চিত্রকর্ম কেনাসহ নানা বিলাসী কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হয়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নাজিব রাজাক ও তার জোটের ঐতিহাসিক পরাজয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা রাখে ওয়ানএমবিডি আর্থিক কেলেঙ্কারি। নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন দেশটির আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যে নাজিবের বিরুদ্ধে প্রতারণার তিনটি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি অভিযোগ আনা হয়। সবমিলে তার বিরুদ্ধে ৪২টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর বেশির ভাগই ওয়ানএমবিডি তহবিল সংক্রান্ত।
তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করে নাজিব রাজাক দাবি করেন, তার তৎকালীন অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের বিশেষ করে পলাতক ধনকুবের ঝো লো’র মাধ্যমে তিনি ‘মিসলেড’ মানে ভুল পথে পরিচালিত হয়েছিলেন। ঝো লোর বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশেই আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।