বুকার পুরস্কার জয়ী উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর রচয়িতা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির ওপর হামলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে এক মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার সময় তার ওপর এ হামলা হয়।
বিতর্কিত ও আলোচিত এই লেখককে শুক্রবার যখন শিটোকোয়া ইনস্টিটিউশনে একটি বক্তৃতার জন্য পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখন একজন লোক মঞ্চ উঠে এই হামলা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, তারা এক ব্যক্তিকে দৌড়ে মঞ্চের দিকে যেতে দেখেন এবং সালমান রুশদিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় তিনি তাকে হয় ঘুষি মারেন, নয়তো ছুরিকাঘাত করেন।
ঘটনার পরপরই সালমান রুশদিকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, এসময় কিছু দর্শক দ্রুত মঞ্চের দিকে ছুটে যাচ্ছেন।
সেখানে উপস্থিত লোকজন হামলাকারীকে থামাতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে রুশদির প্রকৃত অবস্থা কেমন তা জানা যায়নি।
ঘটনার পর দ্রুত গোটা মিলনায়তন খালি করে দেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্কের পুলিশ জানিয়েছে হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি পুলিশ হেফাজতে আছেন।
তারা আরও জানিয়েছে রুশদির ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। ঘটনার পর দ্রুত তাকে হেলিকপ্টারে করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তিনি ঘটনার সময় অ্যাম্পিথিয়েটারের ১৪ বা ১৫তম সারির আসনে ছিলেন। হামলাকারী দর্শক সারির বাঁ দিক থেকে মঞ্চে গিয়ে রুশদিকে একের পর এক ছুরিকাঘাত করতে থাকেন।
স্থানীয় সাংবাদিক বাফেলো নিউজের মার্ক সোমার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, হামলাকারীর মুখে কালো মাস্ক ছিল। তিনি দর্শকদের মধ্য থেকে বেরিয়ে মঞ্চে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং রুশদির ওপর হামলা শুরু করেন।
ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে উপস্থিত দর্শকেরা রুশদির সহায়তায় ছুটে আসেন এবং হামলাকারীকে ধরে ফেলেন। রুশদি পাঁচ মিনিট বা তারও বেশি সময় মেঝেতে পড়ে ছিলেন। পরে তাঁকে হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা একজন চিকিৎসক রিতা র্যান্ডম্যান নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, তিনি রুশদিকে তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা করেছেন। তিনি টাইমসকে বলেন, ঘাড়ের ডান পাশে একটি ক্ষতসহ বেশ কয়েকটি ক্ষত হয়েছে। তাঁর শরীরের নিচে রক্ত বয়ে যাচ্ছিল।
সালমান রুশদি একজন ব্রিটিশ-ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তার দ্বিতীয় উপন্যাস মিডনাইটস চিলড্রেন ১৯৮১ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পায়। তার লেখার অনেকটা অংশ জুড়েই থাকে ভারতীয় উপমহাদেশ। বলা হয়ে থাকে যে তিনি জাদু বাস্তবতার সঙ্গে ঐতিহাসিক কল্পকাহিনী একত্রিত করে লেখেন। পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে অসংখ্য সংযোগ, বিচ্ছিন্নতা ও অভিপ্রয়াণ তার লেখার অন্যতম বিষয়বস্তু।
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তার চতুর্থ উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেস বিশ্বব্যাপী একটি বড় আকারের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। বইটি প্রকাশের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা এর প্রতিবাদ জানায়।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রধান নেতা মরহম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি এই বই রচনার জন্য ১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। তবে, তার মৃত্যুর পর ইরানের সরকার সেই ডিক্রি থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছে। কিন্তু ইরানসহ বিশ্বজুড়েই রুশদি-বিরোধী মনোভাব বজায় ছিল। কেউ রুশদিকে হত্যা করতে পারলে তাকে ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছে ইরান। ২০১২সালে একটি আধা-সরকারি ইরানী ধর্মীয় ফাউন্ডেশন রুশদির জন্য দান ২.৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৩.৩০ মিলিয়ন করেছে। ।
২০০০ সালের পর থেকে রুশদি মূলত নিউইয়র্ক সিটির ইউনিয়ন স্কয়ার এলাকায় বাসবাস করছেন।
সূত্র: বিবিসি