জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা সমাবেশে লাঠিপেটার পরদিন সোমবার বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করেছে পুলিশ। রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করা হয়।
মামলায় বাম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘বেআইনি জনতাবদ্ধে দাঙ্গার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেলসহ পুলিশের কাজে বাধা দেওয়াসহ হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে গুরুতর রক্তাক্ত ও হাড়ভাঙা জখমের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ‘প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনসমূহ’ ব্যানারে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশের শেষ পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে৷ মামলার বিষয়টি শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার নিশ্চিত করেছেন।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৩, ১৪৭, ১৪৯, ১৮৬, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৫৩, ৩০৭ ও ১০৯ ধারায় করা এই মামলায় বাম ছাত্রসংগঠনের ২১ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শাহবাগ থানা সূত্রে জানা গেছে, গতকালের ঘটনায় হওয়া এই মামলায় ২১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে৷ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সহসভাপতি অনিক রায়কে এই মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে৷ এ ছাড়া ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সোহেল, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি তৌফিকা প্রিয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য শান্তা ও ছাত্র ফেডারেশনের জুবা মনি, সানি আবদুল্লাহ, জাবিল আহম্মেদ জুবেন, জাওয়াদ, বাঁধন, আদনান, শাহাদাত, ইভান, অনিক, দিয়া মল্লিক, তানজিদ ও তামজিদ৷
মামলার এজাহারে বলা হয়, শাহবাগ মোড়ে ডিএমপির রমনা অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশীদ, সহকারী কমিশনার বায়েজীদুর রহমান, সহকারী কমিশনার (প্যাট্রল) বাহা উদ্দীন ভূঞা, শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার, পরিদর্শক (নিরস্ত্র) গোলাম মোস্তফা পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছিলেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার সময় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা বিনা অনুমতিতে বেআইনিভাবে শাহবাগ মোড়ের পাকা রাস্তার ওপর বিক্ষোভ সমাবেশ করার নামে রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করেন। পুলিশ তাদের রাস্তার যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ করে। কিন্তু আসামিরা অনুরোধ ও নিষেধ অমান্য করেন। এজাহারে থাকা আসামিরা মিছিল ও স্লোগানের মাধ্যমে হাতে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেলসহ ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরে যেতে অনুরোধ করে৷
এজাহারে আরও বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের পুলিশ থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা লাঠিসোঁটা ও ইটের টুকরা দিয়ে পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের ওপর আঘাত করে মারধর করেন৷ আসামিদের লাঠির আঘাতে রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার বায়েজীদুর রহমান, সহকারী কমিশনার (প্যাট্রল) বাহা উদ্দীন ভূঞা আহত হন।
এদিকে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।
সোমবার বেলা ১২.৩০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সংগঠনগুলোর মোর্চা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।