ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ বানিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে গড়ে ওঠেনি। ভালো স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে আমাদের বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এর পেছনে বড় অবদান আওয়ামী লীগের।
রোববার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় আবদুস সালাম হলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার পর তারাই ক্ষমতায় এসেছিলো। কিন্তু তারা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলো। তারা মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় আজো আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শনকে ধারণ করে ড্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যারা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছে। স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। আরও বেশি সুসংগঠিত হোন। ড্যাব দেশের সাধারণ মানুষের জন্য ভালো কাজ করেছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গেছেন। বিশেষত করোনার সময় তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছে।
তিনি বলেন, পেশাজীবীরা রাজনৈতিক সচেতন হবেন। কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে মিশে যাবে সেটা হওয়া উচিত নয়। আজ দেশ সম্পূর্ণ ভয়াবহ সংকটে। এমন সরকার চেপে বসেছে। যাদের কোনো বৈধতা নেই। গোটা বিশ্বকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে তারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০০৮ সালে কারচুপির নির্বাচন করেছে। ২০১৪ সালে ভুয়া নির্বাচন করেছে। ২০১৮ সালে কি হয়েছে তা সবার জানা। সংসদ হলো রাবার স্টাম্প। একজন কথা বলেন আর বাকিরা বলে বেশ বেশ। জনগণকে নির্বাচন বিমুখ করেছে সরকার।
তিনি বলেন, আজকে অবিশ্বাস্য জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। মানুষ এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে। এমনি সময় জ্বালানির দাম বৃদ্ধি চরমা অমানবিক কাজ। এই সরকার ভয়াবহ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা দেখেছেন ভোলায়, বিএনপি ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছিল। কিন্তু সরকার কীভাবে আক্রমণ করেছে। তারা রহিম ও নূরে আলমকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। গত ১৫ বছরে দেশে অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছে সরকার।
আওয়ামী লীগ দেশকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি ভাবে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা। খালেদা জিয়ার নামে মিথ্যা মামলা। অথচ তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেই টাকা ব্যাংকেই রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। এসবের অবসান হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার জেনে শুনে দেশকে ধ্বংস করেছে। আমাদের সময় ইউরিয়া তিনশো টাকায় মিলতো। এখন ১৩শ টাকার ওপরে। তেল গ্যাস বিদ্যুৎ সবকিছুর দাম বাড়িয়েছে। এ জন্য মানুষ ফসল উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। তারা পেশা পরিবর্তন করছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বাংলাদেশে যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়লো তখনো কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে। সরকার দাম বৃদ্ধি করে টাকা সরকারের পকেটে গেছে। ১৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। কার টাকা এগুলো? সাধারণ মানুষের টাকা। শ্রমিকের টাকা। মানুষকে দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে সরকার জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে সবকিছুর ব্যায় বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যে আন্দোলন তা শুধু বিএনপির নয়। এখানে সবাইকে সম্পৃক্ত করে দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। এলক্ষ্যে সব পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ড্যাবের মহাসচিব ডা. আবদুস সালাম বলেন, আজকে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার লোকেরা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আরো বেশি সংগঠিত হয়ে গণআন্দোলন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনগণের পাশে থাকা ছাড়াও পেশাজীবীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আগামীতেও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সহ যেকোনো সংকটে রাজপথে অগ্রভাগে থাকবে ড্যাব।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মেহেদী হাসান ও ডা. মো. আবুল কালামের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ড্যাবের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গণি চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শামীমুর রহমান শামীম, ডা. শহীদুল আলম, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রকৌশলী মাহবুব আলম, ড্যাবের ডা. মো. আবদুস সালাম, ডা. এমএ সেলিম, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. সায়েদুল হক, ডা. পরিমল চন্দ্র, ডা. ফারুক কাশেম, ডা. কামরুল হাসান সরদার, ডা. মো. ফখরুজ্জামান ফখরুল প্রমুখ।
এছাড়া ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মো. শামসুল আলম, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ডা. সায়ীদ মেহবুব উল কাদির, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. খালেকুজ্জামান দীপু, ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন, একরামুল রেজা টিপু ও কবির আহমেদ রিয়াজ, প্রকৌশলী কেএম আসাদুজ্জামান চুন্নু, এ্যামট্যাবের বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব ও দবির উদ্দিন তুষারসহ শতাধিক চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার ও দেশবাসীর সুস্থতা কামনায় বিশেষ মুনাজাত করা হয়।