প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছি সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে কখনো আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারটা কিন্তু ফেলে দেইনি। প্রতিবার বাজেট করার সময় সেটাকে অনুসরণ করেই কিন্তু আমাদের কর্মপরিকল্পনা কী নেব, কতটুকু আমরা সফল করতে পারলাম আর কতটুকু করা বাকি আছে সেটাও কিন্তু আমরা নির্দিষ্ট করি।
রোববার দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব থেকে কঠিন সময় গেল করোনা মহামারি। করোনা মহামারি যেতে না যেতেই এখন আবার রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ। এটা সমগ্র বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে। আর আমাদের মতো দেশ সেখানে তো আরও বেশি এটার প্রভাব পড়েছে। তারপরও আমি ধন্যবাদ জানাবো আমাদের প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন বলেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি।
তিনি বলেন, আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছি সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা রাজনীতি করি, আমাদের দল আছে। আমরা যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, একটা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করি। যে ইশতেহারে আমরা এ দেশকে কীভাবে আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত করবো সেই নির্দেশনা বা কর্ম পরিকল্পনার কাঠামো থাকে। কাজেই আমরা আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে কখনো আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারটা কিন্তু ফেলে দেইনি। প্রতিবার বাজেট করার সময় সেটাকে অনুসরণ করেই কিন্তু আমাদের কর্মপরিকল্পনা কী নেব, কতটুকু আমরা সফল করতে পারলাম আর কতটুকু করা বাকি আছে সেটাও কিন্তু আমরা নির্দিষ্ট করি এবং আমাদের দলের আরও একটা ঘোষণাপত্র থাকে, গঠনতন্ত্র থাকে সেখানেও আমাদের কতগুলো দিক নির্দেশনা থাকে। সেটা আমরা কিন্তু বাস্তবায়ন করি এবং আমাদের যখন দলের সম্মেলন হয় তখন আবার আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করি, সেখানেও আমরা কতটুকু কাজ সম্পন্ন করতে পারলাম আর কী কী বাকি আছে বা আরও নতুন কী কী করা যেতে পারে সেটা আমরা প্রণয়ন করি। তারই ওপর ভিত্তি করে আমরা কাজ করি।
আমরা আরেকটা কাজ করেছিলাম, আমাদের আশু করণীয় কী কী বা মধ্য মেয়াদি কাজ অথবা আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা। সে ক্ষেত্রে আমরা যেমন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করেছি, পাশাপাশি আমরা আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করে নিয়েছিলাম। ২০১০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তারই ভিত্তিতে আমরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করে কর্মসম্পাদন করেছি, আমরা এখন ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে তারই মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়নের সমস্ত পরিকল্পনাটা হয় একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে। কারণ আমরা এভাবে চিন্তা করিনি যে শুধুমাত্র ধনী থেকে ধনী হোক। আমরা চেয়েছি একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে অবহেলিত মানুষগুলো; আমি নিজে যাদেরকে দেখেছি ৮১ সালে আসার পর, সারা বাংলাদেশ যখন ঘুরেছি। তাদের গায়ে কাপড় নাই, পরনে ছিন্ন একটা বস্ত্র, পায়ে কোনো জুতা-স্যান্ডেল নাই, তাদের শরীরে কোনো মাংস ছিল না-হাড় আর চামড়া ছাড়া। মনে হতো যেন একেকটা কঙ্কাল হেঁটে বেড়াচ্ছে। এ রকম বিভিন্ন এলাকায় আমি নিজে আমার সচক্ষে দেখেছি। স্বাভাবিকভাবে আমাদের লক্ষ্যই ছিল এই মানুষগুলোর ভাগ্য আমাদের পরিবর্তন করতেই হবে। প্রথম ৫ বছরে আমাদের প্রচেষ্টাই ছিল অন্তত তাদের গায়ে একটু কাপড় হবে। পায়ে নিদেনপক্ষে এক জোড়া রাবারের চপ্পল হলেও হবে। কিন্তু সেটুকু আমরা করতে পেরেছিলাম। তারপরে মাঝখানে আমরা আসতে পারিনি এটা ঠিক।
কিন্তু পরবর্তীতে আমরা ২০০৯ থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকারে আছি বলেই আজকে আমাদের একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কিন্তু অনেক পরিবর্তন এসেছে জীবন মানের। অন্তত সেই ক্ষুধার্ত…আমি জনসভা করতে গেলে সেই জনসভায় আমাকে এ ধরনের মানুষগুলো এসে আমাকে শুধু হাত দিয়ে দেখাতো; পেট দেখাতো এক হাত দিয়ে আরেক হাত দিয়ে খাবার চাইতো। এই ছিল তাদের চাহিদা। আমাদের চাহিদাও কিন্তু এখন পরিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ দেশটা অন্তত কিছুটা হলেও আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী যখন আমরা পালন করেছি তখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাও আমরা পেয়েছি। যেটা বাস্তবায়ন করার প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি, বলেন শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রতিবন্ধকতার প্রসঙ্গে টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা পর্যায়ে আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো। আসলে আমাদের দেশে এটা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেনি বা বিদেশেও অনেকের পক্ষে এটা মেনে নেওয়াই সম্ভব হয়নি আমরা কী পারি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো দীর্ঘ দিন সামরিক শাসন চলাকালে আমাদের এত বেশি পরনির্ভরশীল করে ফেলা হয়েছিল যে, আমাদেরও যে একটা শক্তি আছে, স্বকীয়তা আছে বা কর্মক্ষমতা আছে বা চিন্তা-চেতনা আছে সেটাই যেন মানুষ ভুলতে বসেছিল। এটাই সব থেকে দুর্ভাগ্যের। মানুষ যখন নিজের শক্তি সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস হারায় তবে সেই জাতিকে টেনে তোলা খুব কষ্টকর। তবে বাঙালি জাতি সম্পর্কে আমি এটাই বলবো, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৭ই মার্চের ভাষণে যে কথা বলেছিলেন যে ‘কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না’, এই দাবায়া রাখতে পারবা না তিনি বলে গিয়েছিলেন এই জন্য যে তিনি বাংলার মানুষকে চিনতেন। আমিও তার কন্যা হিসেবে পাশে থেকে অন্তত কিছুটা মানুষকে চেনার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই সাহস নিয়েই বলেছিলাম নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু আমরা করবো। আজকে সেই পদ্মা সেতু আমরা করতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে একটা মর্যাদার নিদর্শন এই পদ্মা সেতু। হ্যাঁ, আমরা পারি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমি বলতে পারি যে, সে স্বপ্ন অনেকটাই আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। আজকে আমাদের দারিদ্র্যের হার কমেছে, চিকিৎসা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পেরেছি। খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। পুষ্টির নিশ্চয়তা, শিক্ষার হার বৃদ্ধি করেছি, মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করেছি। আমাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়ন করে এগিয়ে যাচ্ছি।
সূত্র বাসস