মহানবী (সা.)-কে নিয়ে অপমানজনক মন্তব্যে উত্তেজনা উসকে দেওয়ার জন্য বিজেপির বহিষ্কৃত নারী মুখপাত্র নুপুর শর্মাকে দায়ী করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জে.বি. পারদিওয়ালার সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ মৌখিক পর্যালোচনায় বলেছে, তার উচিত পুরো দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া। শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এখবর জানিয়েছে।
বিচারপতিরা বলেছেন,’ যেভাবে তিনি দেশজুড়ে মানুষের আবেগ উসকে দিয়েছেন, দেশে যা ঘটছে সেজন্য এককভাবে এই নারী দায়ী’।
মে মাসের শুরুতে একটি টেলিভিশন বিতর্কে নুপুর শর্মার অপমানজনক মন্তব্য ভারত ও বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় মুসলিম দেশে ক্ষোভের জন্ম দেয়। বেশ কয়েকটি আরব দেশ ভারতীয় কূটনীতিককে তলব করে কঠোর তিরস্কার জানায়।
বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘আমরা ওই বিতর্কে দেখেছি তাকে কীভাবে প্ররোচিত করা হয়েছিল। কিন্তু যেভাবে তিনি সবকিছু বলেছেন এবং পরে বলেছেন তিনি একজন আইনজীবী ছিলেন তা লজ্জাজনক। পুরো দেশের কাছে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত’।
হুমকির কথা উল্লেখ করে ভারতের বিভিন্ন স্থানে দায়ের করা মামলা দিল্লিতে স্থানান্তরের আবেদন জানিয়েছিলেন নুপুর শর্মা। আদালত বিষয়টি আমলে না নেওয়ায় পরে তিনি আবেদন প্রত্যাহার করেন।
তার আইজনীবী বলেছেন, হুমকির কারণে আবেদনে নিজের নাম উল্লেখ করেননি নুপুর শর্মা। কিন্তু বিচারপতিরা তার সমালোচনা করে বলেছেন, ‘তিনি হুমকির মুখে রয়েছেন নাকি তিনি একটি নিরাপত্তা হুমকিতে পরিণত হয়েছেন’।
আদালত জানায়, নুপুর শর্মার মন্তব্য ছিল ‘শান্তিভঙ্গকারী’। বেঞ্চের পক্ষ থেকে তার আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট মানিন্দার সিংয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই মন্তব্য করায় তার (নুপুর শর্মা) কাজ কী?
মানিন্দার সিং আদালতকে জানান, তার মক্কেল ক্ষমা চেয়েছেন। তখন বিচারপতিদের বেঞ্চ সমালোচনা করে বলে, তার উচিত ছিল টেলিভিশনে হাজির হয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। মন্তব্য প্রত্যাহারে তিনি অনেক দেরি করেছেন। সেই প্রত্যাহারও করেছেন শর্তসাপেক্ষে। তিনি বলেছেন, যদি অনুভূতিতে আঘাত লাগে।
আদালত বলেছে, তার মন্তব্য ছিল উসকানির উদ্দেশ্যে।
নুপুর শর্মার ‘সমান আচরণ’ ও ‘কোনও বৈষম্য না থাকার’ যুক্তিরও সমালোচনা করেছে আদালত। বিচারপতিরা বলেছেন, ‘আপনি যখন অন্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন তখন তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু যখন তা আপনার বিরুদ্ধে হয় তখন কেউ আপনাকে গ্রেফতারের সাহস করে না’।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘তার মন্তব্য দেখিয়েছে তার চরিত্রের একগুঁয়ে ও দাম্ভিক চরিত্র। তিনি একটি দলের মুখপাত্র হলে কী হতো। তিনি মনে করেন তার প্রতি ক্ষমতার সমর্থন রয়েছে এবং দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে যেকোনও মন্তব্য করতে পারেন’।
তার আইনজীবী দাবি করেন, টেলিভিশন বিতর্কের সময় উপস্থাপকের একটি প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন নুপুর শর্মা। তখন আদালত বলে, ‘তাহলে ওই উপস্থাপকের বিরুদ্ধে একটি মামলা হওয়া উচিত’।
আইনজীবী যখন নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকারের কথা তুলে ধরেন তখন বিচারপতিরা ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বলেন, ‘গণতন্ত্রে সবার কথা বলার অধিকার রয়েছে। গণতন্ত্রে ঘাসের বেড়ে ওঠার অধিকার রয়েছে এবং গাধার অধিকার রয়েছে তা খেয়ে ফেলার’।
সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষার আদেশের কথা উল্লেখ করে নুপুর শর্মার যুক্তি আদালত আমলে নেয়নি। সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘যখন তিনি টিভি বিতর্কে যান ও সমালোচনা করেন এবং সমাজে প্রভাব ও পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা না করে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেন তখন তাকে সাংবাদিকের আসনে বসানো যাবে না’।