ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। আর এই খবরগুলো আরও ছড়িয়ে দিতে জাতিসংঘের কর্মকর্তাসহ আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেন তিনি।
আর সাক্ষাৎকারে উপস্থাপকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি রাশিয়ার স্বরূপ নিয়ে লজ্জিত না হওয়ার কথা বলাসহ জাতিসংঘ পশ্চিমাদের চাপে আছে এবং ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেন। যেমনটা মনে হচ্ছে বাস্তবতা আসলে তেমন নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে একটি জাতিসংঘ প্রতিবেদন তুলে ধরেন উপস্থাপক; যাতে বলা আছে, ইউক্রেইনের ইয়াহিদনে গ্রামের ৩৬০ বাসিন্দাকে একটি স্কুলের বেজমেন্টে ২৮ দিন থাকতে বাধ্য করেছিল রুশ বাহিনী। তাদের মধ্যে ৭৪ শিশু ও ৫ জন প্রতিবন্ধী ছিল। সেখানে পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা না থাকায় ১০ জনের মৃত্যু হয়।
“এটি কি নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল?”, উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটি দুঃখজনক ব্যাপার। তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারসহ জাতিসংঘ মহাসচিব, অন্যান্য সব প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদেরকে চাপ দিচ্ছে পশ্চিমারা। আর প্রায়ই তারা পশ্চিমাদের ছড়ানো ভুয়া খবরগুলো আরও ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহার হচ্ছে।”
ইউক্রেনে হামলা শুরুর জন্য পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর কর্মকাণ্ডকে প্রথম থেকেই দায়ী করে আসছে রাশিয়া। বিবিসির সাক্ষাৎকারেও সেই একই কথা বলেছেন লাভরভ। তার ভাষায়, ‘আমরা বিশেষ সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিয়েছিলাম। কারণ, ইউক্রেনকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করা যে অপরাধ, তা পশ্চিমাদের বোঝাতে আমাদের কাছে আসলে আর কোনো পথ বাকি ছিল না।’
ইউক্রেইনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এ নিয়ে গুটিকয় পশ্চিমা গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ল্যাভরভ। সাক্ষাৎকারে তিনি ইউক্রেইনে নব্য নাৎসি উপস্থিতি নিয়ে রুশ দাবির পুনরাবৃত্তি করেছেন। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেইনে নাৎসি রয়েছে।
আলাপের একপর্যায়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনে নাৎসি প্রভাব রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পেছনেও রাশিয়ার একটি উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনকে ‘নাৎসি প্রভাবমুক্ত করা’।
রাশিয়ার কর্মকর্তারা প্রায়ই দাবি করে আসছেন যে, তাদের সামরিক বাহিনী ইউক্রেইনকে নাৎসিমুক্ত করার কাজ করছে। আর জার্মান নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারের শরীরে ‘ইহুদি রক্ত’ ছিল—এমন মন্তব্য করে কিছুদিন আগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন খোদ ল্যাভরভ।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একজন ইহুদি হওয়ার পরও কেন রাশিয়া দেশটিকে ‘নাৎসি’ হিসেবে চিত্রিত করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ল্যাভরভ বলেছিলেন, তাতে কিছু আসে যায় না। প্রেসিডেন্ট ইহুদি হলেই যে তার নাৎসি যোগ থাকবে না সেটি হলফ করে বলা যায় না।
“রাশিয়া ধোয়া তুলসি পাতা নয়। রাশিয়া যা সেটাই। আর আমরা কারা তা দেখাতে আমরা লজ্জাও বোধ করি না,” বিবিসিকে এমন কথাও বলেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।