এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, ’এসব প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রবৃদ্ধির হার সাত শতাংশের নিচে, ছয় দশমিক চার শতাংশের মতো। কাজেই প্রবৃদ্ধির হার যেটা প্রস্তাবিত বাজেটে ধরা হয়েছে সেটা অবাস্তব।’
শনিবার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ‘বিজনেস এবং ইকোনোমিক ফোরাম’ আয়োজিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পরবর্তী আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাজেটে যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো গ্রহণযোগ্য বলে আমি মনে করি। কিন্তু বাস্তবায়ন নিয়ে সমস্যা রয়েছে। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে সাড়ে সাত শতাংশ, এটা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা বস্তুনিষ্ঠ না।’
মির্জা আজিজুল বলেন, ‘প্রতি বছর দেখা যায় আমাদের রাজস্ব আহরণ কম থাকে, বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যবহার তার চেয়েও কম থাকে। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। যা প্রস্তাবিত বাজেটের ১১ শতাংশের বেশি। গেলো অর্থবছরে ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল। মার্চ পর্যন্ত ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি আছে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা, যেটা পরবর্তী তিন মাসে আহরণের কথা। এটা আমার কাছে অবাস্তব মনে হয়। সুতরাং রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে এটা বাস্তবায়ন করতে গেলে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা কর দেন তাদের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে আওতা বাড়াতে হবে। এটা ইনকাম ট্যাক্স ও ভ্যাট দুটার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। করদাতা প্রায় ৭০ লাখের বেশি কিন্তু রিটার্ন দেয় অর্ধেকের কম। করদাতার সংখ্যা যদি বাড়াতে পারি তাহলে করের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। কিন্তু এনবিআরের যে অর্জন এখন পর্যন্ত সেটা খুব একটা সন্তোষজনক না।’
নেপালের চেয়ে রাজস্ব আহরণ কম বাংলাদেশের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নেপালের রাজস্ব আহরণ জিডিপির আনুপাতিক হারে ২২ শতাংশ। তাদের মাথাপিছু আয় আমাদের দুই তৃতীয়াংশের মতো। অথচ আমাদের এখানে ১১ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করতে হবে।’
ঘাটতির অর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঘাটতির অর্থায়নের একটা বড় অংশ নেওয়া হবে ব্যাংক থেকে ঋণের মাধ্যমে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেখেছি বেসরকারি খাতে ঋণের যে প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার চেয়ে কম। সরকার যদি ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেয়, তাহলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাবে।’
এসময় তিনি আরও বলেন আয় বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। সূচকের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিপদজনক সূচকের কাছাকাছি আছে।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডলারের বিপরীতে বেশি টাকা গোনা লাগলে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার উপর নির্ভর করে মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করে দিচ্ছে। সেটাও কিন্তু মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও মমিনুল ইসলাম।