গণসংহতি আন্দোলনের শীর্ষ স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনের মধ্যে সবচেয়ে বড় দাবি থাকবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার।
মঙ্গলবার দুপুরে সংলাপ শেষে যৌথভাবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
ফখরুল বলেন, আমরা বরাবরই বলে আসছি এই সরকারকে সরাতে না পারলে কোনো পরিবর্তন আসবে না এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, তাদের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব সরকারকে দেওয়ার সেই জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হবে না। তাই গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, তাদের অধীনে যে কমিশন গঠন হবে তার পরিচালনায় নির্বাচন হতে হবে। সেই নির্বাচনে ভবিষ্যতের পার্লামেন্ট গঠিত হবে।
এ বিষয়ে আমরা কোনো মত ভেদ দেখিনি। শব্দের বা নামের ব্যাপারে কিছু মত ভেদ থাকতে পারে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে সংবিধানের পরিবর্তন এবং কতগুলো মৌলিক আমরা মনে করি অত্যন্ত জরুরি। আলোচনা মধ্য দিয়ে আমরা একটা জায়গা পৌঁছাতে পারবো বলে আমরা বিশ্বাস করি—বলেন ফখরুল।
তিনি আরও বলেন, এই সরকার যারা আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছেন, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে একটি ফলপ্রসূ বিরোধী শক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়ে আমরা এটাকে জয়যুক্ত করতে পারবো।
জোনায়েদ সাকি বলেন, বিএনপির সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বিশেষভাবে বর্তমান সরকারের অধীনে যে ফ্যাসিবাদী-কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে। যেভাবে ফ্যাসিবাদী শাসন বাংলাদেশের জনগণের নাভিঃশ্বাস তুলেছে, জনগণকে বিভক্ত করছে এবং পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে একটা বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলছে—তাতে আমরা উভয় দলই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করি। এই বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের পর্যবেক্ষণের অনেক মিল আমরা খুঁজে পেয়েছি।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশের এই বাস্তবতার অবিলম্বে বদল হওয়া দরকার। এই বদল একমাত্র গণতন্ত্রের গতি মুখে ফেরার মধ্য দিয়েই সম্ভব হতে পারে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে আমরা সমূহ বিপদের মধ্যে পড়বো। বর্তমান সরকার যেহেতু জনগণের ভোট ছাড়া, সম্মতি ছাড়া জবরদস্তি করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে কুক্ষিগত করে রেখেছে, আন্দোলন ছাড়া এই অবস্থা বদলানোর কোনো পথ নেই। আমাদের দলের দিক থেকে আমরা পরিষ্কার অবস্থান নিয়েছি, একটা সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গণতন্ত্রের গতি মুখে ফেরার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। নির্বাচন সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হতে হলে, জনগণ ভোট দিতে পারবেন এমন একটা নির্বাচন করতে হলে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনোভাবেই এই নির্বাচন সম্ভব নয়, বলেন তিনি।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সংলাপ করে তার ওপর আস্থা রাখা এবং সবাইকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে যেভাবে ভয়াবহ ভোট ডাকাতি করা হয়েছে, আগের রাতে সমস্ত ভোট ব্যালট বাকশে ভরে নেওয়া হয়েছে, তারপরে বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বাংলাদেশের মানুষ এটা বিশ্বাস করে না। আমরা মনে করি, বর্তমান সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আজকের আলোচনায় আমরা এ বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছি।
বাংলাদেশের মানুষ গত ৫০ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছে, যারাই ক্ষমতায় থাকে নির্বাচনকে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এবং বাংলাদেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এর সমাধান করতে গেলে বাংলাদেশের সাংবিধানিক ক্ষমতা কাঠামোর বদল দরকার। যে জন্য আমরা সংবিধান সংশোধনের কতগুলো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছি। যেমন নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করতে হবে। নিম্ন আদালতকে উচ্চ আদালতের অধীনস্থ করতে হবে। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি করতে হবে, কোনোভাবেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা যাবে না। আমরা এ রকম ৭টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছি, বলেন তিনি।