14.4 C
Sydney

টপ নিউজবাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের ছাড়িয়ে গেছে : চীনা ইংরেজি দৈনিক

বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের ছাড়িয়ে গেছে : চীনা ইংরেজি দৈনিক

প্রকাশের তারিখঃ

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অর্জনের একটি সুন্দর চিত্র তুলে ধরে চীনের হংকং ভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক- সাউথ চায়না মর্নিং লিখেছে, বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশীদের, বিশেষত ভারত অপেক্ষা রাজস্ব ঘাটতি, মারচেন্ডাইজ বাণিজ্য ভারসাম্য, কর্মসংস্থান, ঋণ এবং জিডিপির সাথে আনুপাতিক বিনিয়োগ হারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোষ্টে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে – বাংলাদেশের মানব-উন্নয়ন কর্মসূচি, বিশেষত মেয়েদের শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে জন্মহার ও বাল্য বিবাহ হ্রাস পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাঙ্ক- দ্য ইনস্টিটিউট ফর পলিসি,অ্যাডভোকেসি এন্ড গভর্ন্যান্স (আইপিএজি)’র চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ মুনির খসরু দৈনিকটিতে সম্প্রতি লিখেছেন, গড় আয় বৃদ্ধি, জন্মহার হ্রাস ও শিশু পুষ্টির মতো মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ এখন অর্থনৈতিক অগ্রগতির ব্যাপকভিত্তিক সুফল পাচ্ছে। সেই তুলনায় ভারত অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে এ দেশের জনগণের জীবনমান বৃদ্ধি পেয়েছে- যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’

খসরুর মতে, বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক তারকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’

নিবন্ধে বলা হয়েছে, মানব উন্নয়ন সূচকে ভারতের অগ্রগতি খুবই কম- বিশেষত অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলোতে এই অবস্থা খুবই শোচনীয়। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর অর্থনৈতিক ভারতে নারী অংশ গ্রহণের হার ছিল মাত্র ১৯ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশে এই হার ছিল ৩৫ শতাংশ।

খসরু লিখেছেন, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ তার বিচক্ষন আর্থিক ও ঋণ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি, এর সামাজিক নিরাপত্তা জাল ও অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

এই আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক আরো বলেন, বাংলাদেশে বিগত ৪০ বছরে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অব্যহত রয়েছে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে। যেখানে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপি হ্রাস পেয়ে ৬.৫৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, সেখানে ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.৫ শতাংশ।

তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের জিডিপি’তে এক তৃতীয়াংশ অবদান রেখেছে কৃষি, তবে ২০১০ ও ২০১৮ সালের মধ্যে এ খাতে ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান বেড়েছে।

১৯৮০ সাল থেকে জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অবদান দ্বিগুণ হয়েছে এবং ১৯৯০’এর দশক থেকে রপ্তানি ২০গুণ বেড়ে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে দেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্স আয় ছিল ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কম মজুরির শ্রমিকরাও দেশের অর্থনীতিতে এই অবদান রাখে।

খসরু আশা করেন যে, শক্তিশালী রেমিটেন্স, রপ্তানি ও কৃষি’র কল্যাণে বাংলাদেশ ২০২৬ সাল পর্যন্ত মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকবে।
ভারতের মাথাপিচু জিডিপি ২,০৯৮ ডলার থেকে কমে হয় ১,৯২৯ মাকির্ন ডলার এবং অর্থনীতি ২.৮৭ ট্রিলিয়ন মাকির্ন ডলার থেকে কমে হয় ২.৬৬ ট্রিলিয়ন ডলার। একই বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি হয় ৩৫৫ বিলিয়ন ডলার। ভারতে টানা ১৫ বছর প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ করে হবার পর মাথাপিছু আয় দাড়ায় ১,৯৬১ ডলার।

২০০৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশের জিডিপি বাড়তে থাকে। খসরু বলেন, ২০০৮ সালের আগে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ভারতের মাথাপিছু জিডিপির অর্ধেক। তবে, ২০১৪ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ৭০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছিল। করোনার কারণে ভারতের অর্থনীতি ৭.৩ শতাংশ হ্রাস পায়, তবে বাংলাদেশে করোনা সংকট সত্ত্বেও ৩.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

তিনি অর্থনৈতিক স্থিতিশিলতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত ৫০ বছরে প্রায় ২৭০ ভাগ বেড়েছে। বাংলাদেশের বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশ অথবা এর কম থাকছে।

বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ। দেশটিতে রফতানিভিত্তিক শিল্পকলকারখার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বস্ত্র, তৈরি পোশাক এবং ফুটওয়ার শিল্পে অধিকাংশ শ্রমিক অদক্ষ অথবা অর্ধ দক্ষ। বাংলাদেশ অধিকাংশ রফতানি পণ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সুবিধা ভোগ করছে। বাংলাদেশে নতুন উদ্ভাবন এবং স্বল্প বেতনের কারণে প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের অনেক বায়ার বাংলাদেশকে বেছে নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভারতের বিহার রাজ্যে বাল্য বিয়ে এবং অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভবতী হওয়ায় শিশু মৃত্যু হার ৪৭ শতাংশ। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ শিক্ষা এবং নারীর ক্ষমতায়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে এ ধরনের মৃত্যু হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করেছে।

ভারতে ২০১৬ সালে কালো টাকা এবং অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় কয়েক বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায় এবং এ সময়ে ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধি পায়। হটাৎ করে ৫০০ এবং ১০০০ রূপির নোট প্রত্যাহার করে নেয়ায় সে সময়ে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ৯৪ ভাগের বেশি কর্মজীবী সমস্যার সম্মুখিন হন।

নিবন্ধে বলা হয়, নোট নিষিদ্ধ করায় সাধারণ জনগণ দৈনন্দিন খাদ্য ও জ্বালানী ক্রয়ে সংকটে পড়েন এবং ব্যবসা বাণিজ্য বাধাগ্রস্থ হয়। রাতারাতি এই নোট প্রত্যাহার করে নেয়ায় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়।

ভারতের ৬ষ্ঠ বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার দেশ বাংলাদেশ। দু’দেশের মধ্যে ২০২০-২১ সালে ১০.৮ বিলিয়ন মাকির্ন ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এই বাণিজ্যের পরিমান ছিল ৯.৫ বিলিয়ন মাকির্ন ডলার। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির আলোকে বাণিজ্য বুদ্ধি পায়, তবে এর সফলতা অনেকটা নির্ভর করবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর।

খসরু আরও বলেন, সম্প্রতি নিত্যপণ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি, সেবা ও জ্বালানী অবকাঠামো উন্নয়ন ক্রসবর্ডার বিনিয়োগ উৎসাহিত করাসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সূত্র বাসস

সর্বশেষ

spot_img

জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

ডেইলি মার্ক নিউজে জনপ্রিয়

ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অংশগ্রহণে ব্রেমেনে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উদযাপন

মো. নাজিম উদ্দীন, ব্রেমেন প্রতিনিধি: বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা...

উজবেকিস্তানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক স্বার্থে উজবেকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ...

প্রধানমন্ত্রী আগামী সেপ্টেম্বরে ভারত সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে : মোমেন

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী...

অস্ট্রেলিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির কোগরার ফ্রাই রিজার্ভ ও মিন্টুতে আজকের ঈদুল ফিতরের...

ডেইলি মার্ক নিউজে সর্বশেষ
Latest

রোহিঙ্গা বিষয়ে আসিয়ানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সিঙ্গাপুরের প্রতি ঢাকার আহ্বান

পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে টেকসই...

একনেকে ১,২২২.১৪ কোটি টাকার ৪টি প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ মোট চারটি...

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিএনপি’র সমাবেশ শুরু

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত...

মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দলের

বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং...