মহামারি করোনার দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত হলো প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রাণের মেলা ঐতিহ্যবাহী‘বৈশাখী মেলা’।
শনিবার বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনি, অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে সিডনির ব্যাংকসটাউন প্যাসওয়ের বিশাল ভেন্যুতে এই ঐতিহ্যবাহী ‘বৈশাখীমেলা’ অনুষ্ঠিত হয়। সিডনির এই বৈশাখী মেলা অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালি ও অন্যান্য ভাষা–ভাষীদের এক মহামিলন মেলা।
প্রায় বিশ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনি, অস্ট্রেলিয়া এই বৈশাখী মেলার আয়োজন করে আসছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনি, অস্ট্রেলিয়ারসাধারণ সম্পাদক, এই বৈশাখী মেলার রূপকার ও মেলা কমিটির আহ্বায়ক গাউসুল আলম শাহজাদা জানান, অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেয়া ওবেড়ে উঠা বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মকে জাতির ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও এর ইতিহাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়াই এই মেলার প্রধানউদ্দেশ্য।
স্পন্সর, সংগঠক, সাংবাদিকসহ সকল সেচ্ছাসেকদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে আগামি বছর ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ একই ভ্যানুতে ‘বৈশাখীমেলার’ তারিখ ঘোষণা করেন। এছাড়াও মেলাকে সাফল্য মন্ডিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনি, অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি সভাপতি ড. মাসুদুল হক এবং মিডিয়া সমন্বয়কারী ও মেলা ক্রোড়পত্রের সম্পাদক ডক্টর রতন কান্ডু প্রবাসী কমিউনিটির সার্বিক সহযোগিতার কথাকৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করে সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এবারের মেলাপ্রাঙ্গণ দর্শক–অতিথিতে ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। শুধু অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালিরাই নয়, অন্যান্য ভাষা–ভাষীঅতিথিদের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য। সিডনির দূর–দূরান্ত থেকেও মেলায় আসে অনেকে। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোটছোট শিশু থেকে শুরু করে প্রবীণরাও বৈশাখী সাজে সজ্জিত হয়ে মেলাতে অংশগ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ডক্টর মোহাম্মাদ সিরাজুল হক ওবঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ড. রতন কুন্ডু।
ঐতিহ্যবাহী এই ‘বৈশাখী মেলা’ প্রাঙ্গণে চারিদিক ঘিরে ছিল বাঙালি খাবার ও দেশীয় পোশাকের নানাবিধ স্টল। খাবারের স্টলগুলিতেছিল নানা ধরনের মুখরোচক দেশীয় খাবারসহ পুরি, চটপটি, পিঁয়াজু, হালিম, জিলাপি, সিঙ্গারা বিরানি সহ রকমারি পিঠা ও মিষ্টি।আর তৈরি পোশাকের স্টলগুলোতে ছিল সালোয়ার কামিজ, জামদানি ও অন্যান্য তাঁতের শাড়ির বিপুল সমাহার।
মেলায় বিভিন্ন রকমের রাইড বড় দর্শকদের যেমন গ্রাম্য নাগরদোলার স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে তেমনি ছোট ছোট বাচ্চাদের সারাবেলাআনন্দে মাতিয়ে রেখেছিল।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়া নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমানের প্রতিনিধি কমার্শিয়াল কাউন্সিলরসাইফুল্লাহ, উইন্ডি লিন্ডসে এমপি, ব্যাংকসটাউন– ক্যান্টারবারি সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর কার্ল সালেহ, স্ট্রেথফিল্ড সিটিকাউন্সিলের কাউন্সিলর রাজ দত্ত, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ সিং চুন্নু, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশজার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মাদ আব্দুল মতিন, সিটি অব ক্যাম্পবেলটাউনের কাউন্সিলর ইব্রাহিম খলিল মাসুদসহঅনেকে।
এছাড়াও মেলায় উপস্থিত হয়েছেন প্রবাসি বাংলাদেশি রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সিডনি থেকেপ্রকাশিত অনলাইন ও পেপার পত্রিকার সম্পাদক ও টিভি সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিক, কবি ও সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের প্রবাসি বাংলাদেশিরা।
আলোচনা পর্বের পর যুঁই চৌধুরী ও হেমার উপস্থাপনায় এবং সঞ্জয় টাবুর মিউজিক, লাইটিং ও সাউন্ডের তত্ত্ববধায়নে শুরু হয় মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। অংশগ্রহণ করে নৃত্যকলা ড্যান্স একাডেমী, কৃষ্টি ব্যান্ড, অমিয়া মতিনসহ সিডনির স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ। দর্শকদের বিশেষ অনুরোধে কৃষ্টি ব্যান্ড একের পর এক গান পরিবেশন করে বৈশাখী মেলাকে সুরের মুর্ছনায় মাতিয়ে রাখে।
সবশেষে বাংলাদেশ থেকে আগত মেলার অন্যতম অকর্ষণ ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম একের পর এক সংগীত পরিবেশন করে মেলার দর্শকদের সুরের মুর্ছনায় মাতিয়ে রাখেন।