ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী ও ফিলিস্তিনিদের চলমান উত্তেজনা মধ্যেই চলতি সপ্তাহে আল-আকসায় ইসরাইলি নাগরিক তথা ইহুদিদের বিষয়ে পুলিশি নিষেধাজ্ঞার আদেশ বাতিল করে রায় দেন জেরুজালেম ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
ওই আদালত এক সিদ্ধান্তে জানান, আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইহুদিরাও প্রার্থনা করতে পারবে। এখানে প্রার্থনা করা বেআইনি নয়।
আদালতের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফের বিক্ষোভে নামে ফিলিস্তিনিরা। বুধবার এ বিষয়ে নতুন করে রায় দেন দেশটির একটি আপিল আদালত।
এদিন রায় ঘোষণা করেন আপিল আদালতের বিচারক আইনাত আভমান-মোলার। রায়ে তিনি বলেন, ‘টেম্পল মাউন্টের (ইহুদিরা আল-আকসা মসজিদকে টেম্পল মাউন্ট বলে থাকে) বিশেষ সংবেদনশীলতা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যায় না। শৃঙ্খলা রক্ষাসহ অন্যান্য বিভিন্ন স্বার্থে এখানে ইহুদিদের উপাসনা বাদ দেওয়া উচিৎ।
ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যকার গত সাত দশকের সংঘাতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকে আল-আকসা মসজিদ। এ মসজিদ জেরুজালেমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা। আল-আকসা মসজিদ জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে অবস্থিত। আধুনিক জেরুজালেম শহরের ভেতরে শূন্য দশমিক ৯ বর্গকিলোমিটার দেয়ালে ঘেরা এলাকাকে ওল্ড সিটি বলা হয়।
ফিলিস্তিনিরা মনে করে, আল-আকসা মসজিদ কেবল তাদের নামাজের স্থানই নয়, তাদের সংস্কৃতি, জাতিরাষ্ট্র ও প্রতিরোধেরও প্রতীক। আল-আকসা মসজিদে বহুকাল ধরে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষেধ।
‘সিটি অব স্টোন : দ্য হিডেন হিস্টোরি অব জেরুজালেম’ বইয়ের লেখক মেরন বেনভেসিতি বলেন, বিশ্ব শান্তিরক্ষা সংস্থা লিগ অব নেশনসের চার্টারেও এই স্থানকে কেবল মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছিল।
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় জেরুজালেমের ওল্ড সিটি দখল করে ইসরাইল। এরপর দেশটির প্রধান ধর্মীয় সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, ইহুদিরা টেম্পল মাউন্টে (আল-আকসায়) প্রবেশ করতে পারবে না।
এরপর এ এলাকা ঘিরে সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইসরাইল সরকার বেশ কয়েকবার বিধিনিষেধও আরোপ করে। ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত কয়েক দশকে আল-আকসায় বহু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। যা পরবর্তী সময়ে জেরুজালেম শহরসহ গোটা অঞ্চলে আরও বড় সংঘর্ষের ক্ষেত্র তৈরি করে।
২০০০ সালে ইসরাইলের বিরোধী দলের নেতা (পরে প্রধানমন্ত্রী) অ্যারিয়েল শ্যারন এক হাজারের বেশি পুলিশ নিয়ে মাউন্ট টেম্পল পরিদর্শনে যান। শ্যারনের ওই এলাকা পরিদর্শনের ঘটনায় ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেয়।
মুসলিমদের পবিত্র স্থানে ইহুদি নেতার আগমনকে ঘিরে বিক্ষোভ একপর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নেয়। আল-আকসা ইন্তিফাদা বা আল-আকসা বিপ্লব (অনেকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদাও বলেন) নামে পরিচিত ওই সংঘাতে তিন হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ও এক হাজার ইসরাইলি মারা যায়।
কয়েক দশকে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে। এই প্রাঙ্গণ ইহুদি সম্প্রদায়েরও পবিত্র স্থান। ফিলিস্তিনকে কোণঠাসা করার নীতির অংশ হিসেবে আল-আকসা মসজিদ ঘিরে প্রায়ই উসকানিমূলক পদক্ষেপ নেয় ইসরাইল।