প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)’ বাংলাদেশের সভাপতিত্বকালেই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য একটি যথার্থ কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
বুধবার ঘানার কাছে সিভিএফ সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিববর্তনের প্রভাব মোকাবেলার ক্ষেত্রে সিভিএফের ভূমিকা এখন বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ।
“এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষে বৈধ কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশের সভাপতিত্বে সিভিএফের সদস্য বৃদ্ধিই তার প্রমাণ।”
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষায় সিভিএফ কাজ করে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
“আমি আশা করছি, প্যারিস চুক্তির অধীনে উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে চাপ অব্যাহত রাখতে পারবে এই ফোরাম।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সভাপতিত্বে জলবায়ু ঝুঁকিকে সমৃদ্ধিতে রূপান্তরে যে পথ তৈরি হয়েছে, তা এগিয়ে যাবে পরবর্তী নেতৃত্বেও।
“বাংলাদেশে আমরা আমাদের ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ তৈরি করছি। আমরা বিশ্বাস করি, এটি অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে একটি দিক-নির্দেশনা দিতে পারে।”
সিভিএফ সদস্য দেশগুলোতে শত কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকির মুখে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও আমরা জলবায়ু সঙ্কট থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে দিতে পারি না। উন্নত দেশগুলোকে প্যারিস চুক্তির অধীনে অর্থায়ন ও প্রযুক্তির বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।”
যেসব দাবি এখনও পূরণ হয়নি, তা পূরণে ঘানার নেতৃত্বে সিভিএফ চাপ দিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
ঘানার কাছে নেতৃত্ব হস্তান্তরের সন্তোষ প্রকাশ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডোকে ধন্যবাদ জানাই অনুষ্ঠানের অংশ হওয়ার জন্য।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জোট সিভিএফের সভাপিইতর দায়িত্ব ২০২০ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য নিয়েছিল বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও ফোরামের কাজ পরিচালনা করতে পেরেছি। আমরা স্বস্তি বোধ করি যে, আমরা আমাদের বেশিরভাগ উদ্দেশ্যসহ আরও অনেক কিছু অর্জন করতে পেরেছি। মহামারীর মধ্যেও আমরা জলবায়ু সঙ্কটের দিকে বিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে পেরেছি।”
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সীমিত রাখতে কোন দেশ কীভাবে ভূমিকা রাখবে, তার পথরেখা তৈরিতে দেশগুলোর জন্য সময় বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
“আমরা তাদের ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ এর মধ্যে তাদের এনডিসি জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। প্রায় ৭০টি দেশ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। আমরা সিভিএফ-ভি২০ জয়েন্ট মাল্টি-ডোনার ফান্ডও তৈরি করেছি, যাতে সদস্যদের জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপে সহায়তা করা যায়। বাংলাদেশ এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ যাতে সিডমানি দিয়েছে।”
২০২১ সালে ‘ক্লাইমেট ভালনারেবলস ফাইন্যান্স সামিট’ আয়োজনের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা গ্লাসগোতে এটি উপলব্ধি করেছি যে, ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণা প্রকৃতপক্ষে সিভিএফের মূল দাবি এবং প্রতিশ্রুতিরই সারসংক্ষেপ।”
বৈশ্বিক ঊষ্ণায়ন মোকাবেলায় পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে বেশি কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর সক্রিয় ভূমিকা আশা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমি আত্মবিশ্বাসী যে সিভিএফের নেতৃত্ব প্রেসিডেন্ট আকুফো-আডোর অধীনে শক্ত হাতে থাকবে এবং ট্রোইকার সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ঘানাকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে।”
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কফি আনানের (ঘানার নাগরিক) সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা স্মরণ করে বলেন, “আমি নিশ্চিত যে তিনি বাংলাদেশ ও ঘানার মধ্যে সিভিএফের মাধ্যমে এই সংযোগ দেখে খুশি হতেন।”
সিভিএফের সভাপতির দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার তার মন্ত্রিসভার সহকর্মী এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকারও প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পরিবেন, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ঘানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শার্লি আয়োর্কোর বোচওয়ে, গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন বান-কি মুনও ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সিভিএফের থিমেটিক অ্যাম্বাসেডর হিসেবে সায়মা ওয়াজেদও অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর সিভিএফ প্রায়োরিটিজ বিষয়ক বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ ফোরামে বাংলাদেশের সভাপতির দায়িত্ব পালনের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
সূত্র বাসস