কুমিল্লার চান্দিনায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের ছোড়া গুলিতে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই কর্মী আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় পুলিশ ড. রেদোয়ানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে কুমিল্লা আদালতে হাজির করে। পরে গতকাল রাত ৮টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
জানা যায়, সোমবার একই স্থানে এলডিপি ও ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঈদপুনর্মিলনী অনুষ্ঠান নিয়ে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় এলডিপির মহাসচিব শটগানের গুলি ছুড়লে ওই দুজন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনার পর উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ড. রেদোয়ান চান্দিনা থানায় গিয়ে অাশ্রয় নেন। খবর পেয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীরা থানা ঘেরাও করেন।
বিকালে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী আখলাকুর রহমান জুয়েল বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ গতকাল সন্ধ্যায় জানান, রেদোয়ান আহমেদের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিকালে তাকেসহ চারজনকে কুমিল্লার আদালতে নেওয়া হয়। রেদোয়ান আহমেদ স্বপ্রণোদিত হয়ে গুলি চালিয়েছেন। তার গাড়িতে হামলার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গাড়িটি অক্ষত ছিল। কী কারণে তিনি গুলি করলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তারকৃত অন্য তিনজন হলেন- মহিচাইল গ্রামের রবিউল্লাহর ছেলে মো. আলী (৩৭), হারং গ্রামের আব্দুল মবিনের ছেলে বাকি বিল্লাহ (৩৯) ও ড. রেদোয়ান আহমেদের গাড়িচালক সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মেছড়া খামারখাতা গ্রামের আব্দুল হাই শেখের ছেলে রেজাউল করিম (৫৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চান্দিনা পৌরসভা কার্যালয় সংলগ্ন রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ মমতাজ আহমেদ ভবনের সামনে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসের সামনে আসার পর কলেজগেটে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা রেদোয়ান আহমেদের গাড়ি থামিয়ে তার সাথে কথা বলেন। কিছুক্ষণ পর রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যাওয়ার সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই গাড়িতে তরমুজ ছুড়ে মারে। এ সময় রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি থেকে তার শটগান দিয়ে পর পর দুই রাইন্ড গুলি ছোড়েন। গুলিতে আহত হন চান্দিনা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা রূপনগর এলাকার বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে মাহমুদুল হাসান জনি সরকার (২৮)। তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অপরজন হলেন চান্দিয়ারা গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হোসেন নাঈম (২৮)। তিনি বরকইট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী। আহত দুজনকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সামিরুল খন্দকার রবি জানান, চান্দিনা ছাত্রলীগ ঈদের আগ থেকে ৯ মে ঈদপুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করতে প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই মধ্যে পৌর এলডিপিও একই দিন একই স্থানে ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে। সোমবার দুপুর থেকে ছাত্রলীগের আয়োজনে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস ২-এর মমতাজ আহমেদ ভবনের সামনে আসতে শুরু করেন। ঠিক আড়াইটায় দিকে রেদোয়ান আহমেদ ক্যাম্পাসের সামনে এসে গাড়ি থেকে দুই রাইন্ড গুলি করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন। এ ঘটনায় জনি ও নাজমুল গুলিবিদ্ধ হন।
পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী আখলাকুর রহমান জুয়েল বলেন, রেদোয়ান আহমেদ রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর অমানবিকভাবে গুলি চালিয়েছেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, আমাদের পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান ছিল। আমাকে এতে প্রধান অতিথি করে চিঠির মাধ্যমে পৌর এলডিপি কার্যক্রম পরিচালনা করে। এরই মধ্যে আমাদের প্রধান ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে প্রোগ্রাম করতে প্রশাসন অনুমতি দেয়। আমাদের ক্যাম্পাস ২-এর মমতাজ আহমেদ ভবনে পূর্বনির্ধারিত প্রোগ্রাম করার কথা। দুপুরে আমি ক্যাম্পাস ২-এর সামনে গেলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের লোকজন আমার গাড়িতে হামলা করে। আমি আত্মরক্ষার্থে আমার লাইসেন্স করা শটগান দিয়ে গুলি চালাই। কার গায়ে গুলি লেগেছে আমি বলতে পারব না। পরে আমি থানায় গিয়ে আশ্রয় নেই।
এ ব্যাপারে কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দাউদকান্দি সার্কেল) মো. ফয়েজ ইকবাল জানান, পাবলিকের রোষানলে পড়ে রেদোয়ান আহমেদ থানায় আশ্রয় নিতে আসেন। পরে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করি।