যেসব অ্যাপ অনেক সময় ধরে আপডেট হচ্ছে না, সেগুলোকে অ্যাপস্টোর থেকে সরিয়ে ফেলছে অ্যাপল। প্রতিষ্ঠানটির এমন সিদ্ধান্তের বিপরীতে বিভিন্ন অ্যাপ ও গেইম নির্মাতাসহ সোচ্চার হয়েছেন অনেকেই।
অ্যাপলের দিক থেকে আক্রান্ত অ্যাপ নির্মাতাদের কাছে ‘অ্যাপ ইমপ্রুভমেন্ট নোটিশ’ শিরোনামে একটি স্ক্রিনশট করা ই-মেইল গিয়েছে। অ্যাপল সতর্ক করেছে, যেসব অ্যাপ ‘উল্লেখযোগ্য’ সময়ের মধ্যে আপডেটেড হবে না,অ্যাপস্টোর থেকে সেসব অ্যাপ সরিয়ে ফেলবে তারা।
আপডেটের জন্য নির্মাতাদের কেবল ৩০ দিন সময় দেওয়ার কথা প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ।
“আপনি এই অ্যাপ চালু রাখতে পারেন, অ্যাপস্টোর থেকে নতুন ব্যবহারকারীর বিশ্লেষণ ও ডাউনলোডের জন্য। তবে সেজন্য ৩০ দিনের মধ্যে একটি আপডেট জমা দিয়ে এবং সেই আপডেট পর্যালোচনার পর।” –মেইলে লিখেছে অ্যাপল।
“যদি ৩০ দিনের মধ্যে কোনো আপডেট জমা না পড়ে, তাহলে অ্যাপটি অ্যাপস্টোর থেকে সরানো হবে।”
তবে, অ্যাপস্টোর থেকে অ্যাপল ‘সেকেলে’ অ্যাপগুলো সরিয়ে ফেললেও, আগে থেকে ডাউনলোড করা অ্যাপ বহাল থাকবে ব্যবহারকারীর ডিভাইসে।
‘প্রোটোপপ গেইমস’ নির্মাতা রবার্ট কাবওয়ে সহ বেশ কিছু অ্যাপ নির্মাতা এই পরিবর্তনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
কাবওয়ে টুইটারে জানিয়েছেন, তার পুরোপুরি সক্রিয় গেইম ‘মোটিভোটো’ সরানোর হুমকি দিয়েছে অ্যাপল। কারণ, এটি ২০১৯ সালের মার্চ থেকে আপডেট হয়নি।
‘ফ্লিকটাইপ অ্যাপল ওয়াচ’ কিবোর্ডের নির্মাতা কোস্টা এলেফথেরিও বলছেন, তার বিশেষভাবে দৃষ্টিহীনদের জন্য তৈরি অ্যাপের একটি সংস্করণ সরিয়ে ফেলেছে অ্যাপল। কারণ, গত দুই বছরে এটি আপডেট হয়নি।
এলেফথেরিও টুইটে উল্লেখ করেছেন, এক সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় অ্যাপ ‘পকেট গড’ এখনও রয়েছে অ্যাপস্টোরে, যদিও এর সর্বশেষ আপডেট এসেছে ২০১৫ সালে।
গেইম নির্মাতা এমিলিয়া লেজার-ওয়াকার অভিযোগ করেছেন, অ্যাপল তার পুরনো কয়েকটি গেইম অ্যাপস্টোর থেকে সরিয়ে ফেলছে।
এ ছাড়া, অন্যান্য নির্মাতারাও একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বলছেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, অ্যাপ আপডেট করার সময় পাননি তারা।
‘অ্যাপ স্টোর ইমপ্রুভমেটস’ পেইজে অ্যাপল বলছে, “আমরা অ্যাপ মূল্যায়নের একটি চলমান পদ্ধতির বাস্তবায়ন করছি।”
“সেই অ্যাপগুলো সরানো হচ্ছে, যেগুলো নিয়ম অনুযায়ী আর কাজ করছে না। এগুলো বর্তমান ‘রিভিউ গাইডলাইন’-কে অনুসরণ করছে না অথবা সেকেলে হয়ে গেছে।”
তবে, পেইজে কোনো সময় উল্লেখ নেই। তাই, বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়, অ্যাপল কখন পোস্টটি প্রকাশ বা সর্বশেষ আপডেট করেছে। এ প্রসঙ্গে অ্যাপলের মতামত জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক কোনো উত্তরও পায়নি ভার্জ।
২০১৬ সালেই অ্যাপস্টোর থেকে ‘পরিত্যক্ত’ অ্যাপ সরানোর কথা জানিয়েছিল অ্যাপল। সেই সময়ও তাদের অ্যাপ সরানোর আগে, আপডেটের জন্য ৩০ দিন সময় দিয়েছিল অ্যাপল।
যদিও, অ্যাপল বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত এই নিয়ম প্রয়োগ করছে, না-কি সম্প্রতি একটি ব্যাপক ‘ঝটিকা অভিযান’ চালাচ্ছে, সে বিষয়টি পরিষ্কার নয়।
অ্যাপল কোন অ্যাপগুলোকে ‘সেকেলে’ হিসেবে বিবেচনা করছে, সেই বিষয়েও পরিষ্কার কোনো রূপরেখা নেই বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ভার্জ।
নির্মাতাদের সর্বশেষ অ্যাপ আপডেটের পর অতিবাহিত সময়ের ওপর ভিত্তি করে অথবা ‘আইওএস’-এর সাম্প্রতিক সংস্করণের সঙ্গে অসামঞ্জস্য এই উদ্বেগের কারণ কি না, সেটিও পরিষ্কার নয়।
এই নীতির বিপক্ষে কিছু সমালোচক বলছেন, কনসোলে খেলা যায় এমন পুরনো ভিডিও গেইমের মতোই, যেকোনো বয়স নির্বিশেষে মোবাইল অ্যাপগুলো চালু থাকা উচিত।
অন্য সমালোচকরা বলছেন, এই নীতি অকারণে নির্মাতাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করছে। এ ছাড়া, ইন্ডি গেইমের পেছনে কতটা পরিশ্রম হয়, অ্যাপল সেটিকেও পুরোপুরি সম্মান দিচ্ছে না বলে দাবি করছেন তারা।
ভার্জের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুগল প্লে স্টোর একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিল এপ্রিলের শুরুতে। যেখানে সেসব অ্যাপের উপস্থিতি সীমিত করবে, যেগুলো সর্বশেষ প্রধান আন্ড্রয়েড সংস্করণ বের হওয়ার দুই বছরের মধ্যে একটি ‘এপিআই’ লেভেল-এ পৌছাবে না।
‘অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে এপিআই। এটি এক ধরনের সফটওয়্যার মধ্যস্থতাকারী, যা দুটি অ্যাপ্লিকেশনকে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে সহযোগিতা করে।
অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতাদের হাতে অ্যাপ আপডেটের জন্য সময় রয়েছে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত। তবে, কেউ এই সময়ের মধ্যে আপডেট না করতে পারলে, তারা আপডেটের সময় ছয় মাস বাড়াতে আবেদন করতে পারবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ভার্জ।
দুই শীর্ষ অ্যাপ স্টোরের পুরনো এসব অ্যাপের প্রতি বিরূপ আচরণের বিপরীতে কয়েকজন নির্মাতা, বিশেষ করে ইন্ডি স্টুডিওগুলোর টিকে থাকতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ভার্জ।