ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের মামলায় প্রধান আসামি বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
শুক্রবার বিকালে ধানমণ্ডির বাসা থেকে অ্যাডভোকেট মকবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, মামলার ভিত্তিতেই মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে রাত পৌনে ১০টার দিকে নিউ মার্কেট থানায় হস্তান্তর করে।
নিউ মার্কেট থানার ওসি স. ম. কাইয়ুম বলেন, শনিবার পুলিশ হেফাজত চেয়ে মকবুলকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে।
মকবুল হোসেন নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি। ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড নামের যে দুই দোকানের কর্মচারীদের দ্বন্দ্ব থেকে গত সোমবার রাতে নিউ মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, সেই দোকান দুইটি সিটি করপোরেশন থেকে মকবুলের নামে বরাদ্দ হওয়া।
তবে কোনো দোকানই নিজে চালাতেন না। রফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম নামে দুজনকে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন দোকান দুটি। রফিকুল ও শহিদুল আবার পরস্পরের আত্মীয়।
মকবুল দাবি করে আসছেন, ‘বিএনপি করার কারণে’ পুলিশ তাকে এ মামলার আসামি বানিয়েছে।
দোকান মালিকদের ভাষ্য, ইফতারের টেবিল বসানো নিয়ে ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মীদের বচসার পর এক পক্ষ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মীকে ডেকে আনে। তারা গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর ছাত্রাবাসে ফিরে আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সোমবার মধ্যরাতে নিউ মার্কেটে হামলা চালাতে গেলে বাঁধে সংঘর্ষ।
মঙ্গলবার দিনভর চলা এই সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। তাদের মধ্যে এক দোকানকর্মী আর এক ডেলিভারিম্যান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
রক্তক্ষয়ী সংঘাতে দু’দিন নিউ মার্কেট এলাকায় অচলাবস্থার পর বুধবার রাতে যখন সমঝোতা বৈঠকের তোড়জোড় চলছিল, তখন রাত ৯টার পর তিনটি মামলা হয়। এর একটিতেই আসামির তালিকায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সেই মামলাটিতে ১ নম্বরে রয়েছে আইনজীবী মকবুলের নাম। এই তিনটি মামলার মধ্যে দুটি করেছে পুলিশ।
একটি করেছেন সংঘর্ষে প্রাণ হারানো নাহিদ হাসানের চাচা মো. সাঈদ। হত্যার অভিযোগে করা এই মামলায় আসামির তালিকায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। সংঘর্ষের সময় হাতবোমা ফাটানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিস্ফোরক আইনে মামলাটি করেছেন নিউ মার্কেট থানার এসআই মেহেদী হাসান। এতে আসামি হিসেবে ১৫০ থেকে ২০০ জনের কথা বলা হলেও সবাই অজ্ঞাতনামা। দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জ্বালাও-পোড়াও, পুলিশের কাজের বাধা দেওয়ার অভিযোগে নিউ মার্কেট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির যে মামলা করেছেন, তাতেই শুধু আসামির তালিকায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আর অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে ২০০ থেকে ৩০০ জন ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মী এবং ৬০০-৭০০ কলেজ শিক্ষার্থীর কথা বলা হয়েছে এজাহারে। ২৪ জন আসামির মধ্যে মকবুল ছাড়াও রয়েছেন- আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, জাপানি ফারুক, মিজান বেপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল।