পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পাঠানো হয়েছিল স্পেসএক্স-এর ৪৯টি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট। কিন্তু ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের কারণে এর মধ্যে ৪০টিই হারিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান।
গত সপ্তাহে আমেরিকার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ফ্যালকন-৯ রকেটে করে ওই ৪৯টি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করা হয়।
গত মঙ্গলবার স্পেসএক্স এক বিবৃতিতে জানায়, ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের কারণে ৮০ শতাংশ কৃত্রিম উপগ্রহ ‘উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত’ হয়।
মহাকাশ আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, এই ধরনের ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এবং সূর্য থেকে আধানযুক্ত কণার মধ্যে ব্যাঘাত ঘটায়, যা সৌর বায়ু নামে পরিচিত। ঝড়ের গতি এবং তীব্রতার কারণে বায়ুমণ্ডলের টেনে নেওয়ার প্রবণতা আগের উৎক্ষেপণের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি মাত্রায় আরোহণ করেছে। এই কারণেই স্যাটেলাইটগুলোর জন্য তাদের কক্ষপথে পৌঁছানো কঠিন হয়ে উঠেছিল।
কৃত্রিম উপগ্রহগুলো ঠিক যেদিন উৎক্ষেপিত হয়েছিল, তার পরের দিনই ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের কারণে আছড়ে পড়ে। সূর্যশিখার প্রবল দাপটে ওই ৪০টি স্যাটেলাইট কক্ষচ্যুত হয়ে অনেক দূরে ছিটকে পড়ে।
স্পেসএক্স-এর বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন যে, কল্পনার থেকেও অন্তত ৫০ গুণ বেশি শক্তিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরে ধেয়ে আসে সূর্যের বিকিরণ। আর তাতেই স্টারলিঙ্কের এই স্যাটেলাইটগুলি গতিপথ হারিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং তা প্রায় ৪ ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। এই ঝড় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথেই অর্থাৎ স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইটগুলো ঠিক যেখানে পাঠানো হয়েছিল, জিপিএস থেকে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।
স্পেসএক্স-এর গবেষকদল দাবি করছেন, পৃথিবীর কক্ষপথের ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত স্যাটেলাইটগুলোকে স্থাপন করে একাধিক জরুরি তথ্য সংগ্রহ করাই ছিল মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি এই ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে, সেই বিষয়টাও জানার জন্য স্যাটেলাইটগুলো উৎক্ষেপিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত স্যাটেলাইটগুলো অন্য স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংঘর্ষ করবে না। কারণ, তারা ডিঅরবিট করে।
প্রসঙ্গত, স্পেসএক্স এখনও পর্যন্ত ২ হাজারেরও বেশি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করেছে, যার মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৯০০টি কাজ করছে।