ময়মনসিংহ থেকে: স্বামীকে হারিয়েছেন প্রায় চল্লিশ বছর আগে। নেই কোন সন্তানাদি। মা-বাবা, ভাইবোন বলতে পরিবারের কেউ নেই। পাড়া প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় কোনো রকম চলে তার জীবনযাপন। থাকতো চাচাতো ভাইয়ের ভাঙাচোরা ঘরে। এভাবেই জীবনযাপন করা ষাটোর্ধ গোলাপী রাণী অবশেষে পেল ত্রিশাল থানা-পুলিশের সহায়তায় মাথা গোঁজার ঠাঁই।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, এই গোলাপী রাণী ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের অলহরী খারহর গ্রামের মৃত মহন রবিদাশের একমাত্র মেয়ে। বাবা মহন রবিদাশ মারা গেছেন গোলাপী রাণীর বিয়ের কিছুদিন পরই। মাকেও হারিয়েছেন অল্প সময়ের মধ্যে। ঝড়-বৃষ্টি আর শীতে অমানবিক কষ্ট করেছেন তিনি। যখন জুটেছে খেয়েছেন, নয়তো না খেয়েই কাটিয়েছেন।
দুঃখ-কষ্টে ভরা গোলাপীর জীবনে ঘর পেয়ে এখন বাধভাঙ্গা আনন্দ-উচ্ছাস। যার ভালোভাবে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাই ছিল না। সে পেয়েছে একটি আধুনিক সেমি পাকা ঘর।
এ বিষয়ে প্রতিবেশী লক্ষ্মণ রবিদাস বলেন, গোলাপী রাণী মানুষের কাছ থেকে চাইয়া-মাইগ্যা খাইতো। তার এ জীবনে আপন বলতে কেউ নাই। পাড়া-প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় সে চলতো। পুলিশের তরফ থেকে ঘর পাওয়াতে তার থাকার কষ্ট দূর হলো।
গোলাপীর চাচাতো ভাই লিটন রবিদাস বলেন, আমার বোনটি বড়ই অসহায়। সে এখন জীবনের শেষ সময়ে এসে দাঁড়িয়েছে। বিয়ের কয়েকবছর পরেই স্বামীকে হারিয়েছেন। তার কোনো সন্তান সন্তুতিও নেই। আমাদের ও পাড়া-প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় খেয়ে, না খেয়ে কোন রকম চলছিল সে। ঘর পাওয়াতে তার থাকার কষ্ট দূর হয়েছে। এ মহৎ উদ্যোগের জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।
গত রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ভার্চ্যুয়ালি ঘরের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর ত্রিশাল থানার ওসি ঘর বুঝিয়ে দেন, খোঁজ-খবর নিয়েছেন। সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে, এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা বলছিলেন গোলাপী রাণী।
তিনি আরও বলেন, অনেক দিন ধরে ঘর ছাড়া অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছি। পুলিশ ঘর বানায়া দিছে, এতে আমি অনেক খুশি। জীবনের শেষ বেলায় এসে শান্তি পেলাম।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ কর্মসূচির আওতায় গোলাপী রাণীকে ঘর করে দিয়েছে ত্রিশাল থানা-পুলিশ।
ওসি মো. মাইন উদ্দিন বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ কর্মসূচির আওতায় গোলাপী রাণীকে একটি আধুনিক ও টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক চালু করা হয়েছে।