বর্ষার আগে নগরের নালা-খাল পরিষ্কারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
বুধবার চসিকের টাইগারপাস কনফারেন্স হলরুমে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ অর্থ চান মেয়র।
মেয়র বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল কাজের কিছু সিডিএ ও কিছু করেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ৩৪ ব্রিগেড। এই প্রকল্পের অধীনে নগরীর ওয়ার্ডগুলোতে বেশ কিছু ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ড্রেনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণে সেটি করপোরেশনের কোনও বরাদ্দ নেই। বর্তমানে করপোরেশনের ফান্ডের অবস্থাও ভালো না। এমন পরিস্থিতিতে নালা-খাল পরিষ্কারের দায়িত্ব করপোরেশনের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ সিটি করপোরেশনের ফান্ড ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব রয়েছে। যদি সিডিএ নালা-খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজে বরাদ্দ দিতে না পারে সেক্ষেত্রে বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় নেই।’
সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘এবার নগরীতে জলাবদ্ধতা অন্যান্য বারের মতো হবে না। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের চলমান চার বছরের কাজের মধ্যে এখনও দুই বছরের কাজ বাকি। এখনই শতভাগ ফল পাবো, এটা মনে হয় না। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং প্রয়োজন।’
সভায় জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৮ দশমিক ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পৃথক সাতটি খালের উন্নয়নকাজ শেষ হওয়া এলাকার কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। তারা এলাকার বিভিন্ন সমস্যার কথা প্রকল্প পরিচালকের কাছে তুলে ধরেন। তাদের বেশিরভাগের বক্তব্য ছিল, বর্ষার আগে খালের মাটি ও বাঁধ অপসারণ, নালার স্ল্যাব ঠিক করা ও প্রকল্পের কাজের সঙ্গে কাউন্সিলরদের সমন্বয় করা।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘আসন্ন বর্ষার আগে অর্থাৎ চলতি এপ্রিল মাস পর্যন্ত আমরা কাজ করতে পারবো। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খালগুলোতে ১৭৬ কিলোমিটারের মতো ওয়াল নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসন কাজে এটা বড় অগ্রগতি বলা যায়। পাশাপাশি অনেক এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানও চালাতে হচ্ছে। পুরো প্রকল্পের কাজ সমানতালে করা সময়সাপেক্ষ। কারণ এখানে বহু প্রতিবন্ধকতা আছে। তবে এবছর নগরীর প্রবর্তক মোড়ে প্রতিবারের মতো জলাবদ্ধতা হবে না। কারণ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অপসারণসহ পেছনের খালের অবৈধ স্থাপনা সরানো হচ্ছে।’
শাহ আলী বলেন, ‘শহরের পানি খালে নিতে হলে ড্রেন নির্মাণ করা প্রয়োজন। যে কাজ আমরা ইতোমধ্যে শেষ করেছি। এসব ড্রেনের স্ল্যাব ঢালু করে তৈরি করা হয়েছে। যাতে পানি সহজে খালে পৌঁছাতে পারে। আমরা মোট ৫০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করেছি। খালের নির্মাণকাজ এখন দৃশ্যমান। যে সাতটি খালের উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছে তা বুঝে নিতে ইতোমধ্যে সিডিএকে পত্র দিয়েছি। প্রকল্পে আমাদের কাজ হলো অবকাঠামোগত কাজ শেষে বুঝিয়ে দেওয়া। রক্ষণাবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো করবে। জুনের মধ্যে ১৮টি খালের রিটেইনিং ওয়ালের কাজ শেষ হবে।’
লে. কর্নেল শাহ আলী নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ২৩ খালের স্লুইস গেট নির্মাণ ও ১২টি খালের রেগুলেটর নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সম্পন্ন না হওয়াকে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘এসব কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহযোগিতা লাগবে। তবে মে মাসের মধ্যে পাম্প বসানের কাজ সম্পন্ন হবে। এজন্য প্রশিক্ষিত লোকবল নিয়োগ করা গেলে জলাবদ্ধতা নিরসনের সুফল কিছুটা দৃশ্যমান হবে। তবে পুরোপুরি সুফল পেতে আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
এ সভায় উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, মো. মোবারক আলী, মো. ইসমাইল, আবদুল মান্নান, সালেহ আহমদ চৌধুরী, জিয়াউল হক সুমন, হাসান মুরাদ বিপ্লব, মো. মোর্শেদ আলম, মো. কাজী নুরুল আমিন, পুলক খাস্তগীর, আবদুস সালাম মাসুম, আবুল হাসনাত বেলাল, এম. আশরাফুল আলম, মো. নুরুল আলম, হাজী নুরুল হক, মো. নুরুল আমিন ও ওয়াসিম উদ্দিন প্রমুখ।