উবায়দুল্লাহ রুমি, ময়মনসিংহ থেকেঃ ময়মনসিংহ নগরীতে বেড়েই চলেছে মশার উপদ্রব। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগও কোনো কাজে আসছে না। নগরীর বাসিন্দারা বলছেন, মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি বস্তি এলাকায়। দিনের বেলায়ও কয়েল জ্বালিয়ে রেহাই পাচ্ছে না মানুষ। নাগরিক নেতাদের অভিযোগ, ফগার মেশিনে মশা মারা সিটি করপোরেশনের ‘তামাশা’ ছাড়া অন্য কিছু নয়। তবে মশা মারতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করার কথা জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে প্রায় ১০ লাখ লোকের বসবাস। বর্ষা সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো এ বছরও বেড়েছে মশার উপদ্রব। গত বছর মশা নিধনে ব্যাঙ এবং মাছ ছাড়া হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। এ বছর সিটি করপোরেশন ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করলেও মশার উপদ্রব তেমন কমেনি। এতে বেশি বিপাকে রয়েছেন বস্তি এলাকার মানুষ। তাঁদের দাবি, এ বছর সিটি করপোরেশন থেকে ওই এলাকায় মশক নিধনে অভিযান চালানো হয়নি।
নগরীর নাটকঘর লেন রেলওয়ের পরিত্যক্ত এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছর শীতের পর বর্ষার আগে সিটি করপোরেশনের লোকজন মশার ওষুধ ছিটায়। এ বছর তা করেনি। এ কারণে মশার উপদ্রব অনেক আগে থেকেই বেড়েছে।’
একই এলাকার রহিমা খাতুন বলেন, ‘দিন-রাত দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে মশার যন্ত্রণায়। তবুও মুক্তি মিলছে না। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছি ছোট শিশুদের নিয়ে।’
পিঞ্জিরা আক্তার নামে এক বৃদ্ধা বলেন, ‘রেললাইনের পাশে থাকি, তাই ঝোপঝাড়ও বেশি। সেখানে মশার উৎপাত দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা। কয়েল জ্বালিয়ে দিনের বেলায় আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হলে মৌমাছির মতো সারা শরীরে মশা লেগে থাকে।’
বস্তির বাসিন্দারা বলছেন, তাঁরা গরিব মানুষ হওয়ায় তাঁদের কথা কেউ ভাবে না। ফলে মশার যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারেন না। মশার কামড়ে শরীর ফুলে যায়।
জেলা জন উদ্যোগের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, ‘মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ আমরা দেখতে পাইনি। মশা নিধনের নামে নালায় মাছ, ব্যাঙ ছেড়ে টাকা অপচয় করা ছাড়া আর কিছুই হয়নি। ফগার মেশিনের ধোঁয়ায় কোনো মশা মরে না। সিটি করপোরেশনের উচিত, যারা এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ, তাঁদের পরামর্শ নেওয়া।’ মশক নিধনে পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্র্যাশ প্রোগ্রামে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে পরিচালনা করলে হয়তো কাজে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের প্রতি ওয়ার্ডে মশক নিধনের জন্য চার দিন করে ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। পাশাপাশি মশার প্রজনন, লার্ভা, উড়ন্ত মশা নিধনে কাজ করা হচ্ছে। ওয়ার্ডবাসীকে বলা হয়েছে, কচুরিপানা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে রাখার জন্য। তবে অন্যান্য এলাকার তুলনায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে মশার উপদ্রব কিছুটা কম।’
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) খাদ্য ও স্যানিটেশন কর্মকর্তা দীপক মজুমদার বলেন, ‘মশক নিধনে আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে জুনভিত্তিক ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছি। সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলছে। তবে সম্প্রতি মশার উপদ্রব একটু বেড়েছে। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে মশার লার্ভার উৎপত্তি হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণে অচিরেই সিটি করপোরেশন অভিযান পরিচালনা করবে।’