উবায়দুল্লাহ রুমি, ময়মনসিংহ থেকেঃ গত ৭.২.২০২২ ইং তারিখে অনুষ্টিত ইউপি নির্বাচনে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে উপজেলার ১১ ইউনিয়নের মধ্যে মাইজবাগ ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণায় কারচুপির অভিযোগে জেলা ময়মনসিংহের বিজ্ঞ সদর সিনিয়র সহকারী জজ ও নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। ওই ইউনিয়নের বাংলাদেশ আ.লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মো. ফরিদ মিয়া বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন । মামলা নং২৭/২০২২ নির্বাচন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের নির্বাচন মোট ১৫টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। তন্মধ্যে বিলরাউল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র,দক্ষিণ দত্তগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং উত্তর দত্তগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রার্থীর ১নং প্রতিপক্ষ জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী সাইদুল ইসলাম বাবুলের লোকজন সকাল থেকেই কেন্দ্র দখলের চেষ্টায় রত ছিল। পরে রাত ১১টার সময় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসাররা জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ১নং প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আ.লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ভোট প্রতিপক্ষের লাঙল প্রতীকে দেখিয়ে বিলরাউল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে ১০৫ ভোট এবং লাঙল প্রার্থীকে ৮৯০ ভোট দেখিয়েছেন। দক্ষিণ দত্তগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে ৬৭ ভোট এবং লাঙল প্রতীকে ১৫২০ ভোট দেখানো হয়েছে এবং উত্তর দত্তগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার ভোট দেখানো হয়েছে ৫৬ ভোট এবং লাঙলের দেখানো হয়েছে ১৩৫১ ভোট।
তবে সবচেয়ে বড় অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে বিলরাউল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফলে। ওই কেন্দ্রের দায়িত্ব পালনকারী প্রিসাইডিং অফসার স্বাক্ষরিত রেজাল্টশীট মোতাবেক জানা যায়,ওই কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ১৮০৯ জন। তন্মধে বৈধ ভোটের সংখ্যা ১৪৩২ এবং বাতিল ভোটের সংখ্যা ৩৭৭ জন। অর্থাৎ এই কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি দেখানো হয়েছে শতভাগ। জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে একজন প্রিসাইডিং অফিসার ফরম ঞ পূরণ করে ভোট গণনার বিবরণী প্রদান করেন । সেই প্রেক্ষিতে রিটার্নিং অফিসার ফরম ঠ পূরণ করে প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক সরবরাহকৃত গণনার ফলাফলের একীভূত বিবরণী প্রকাশ করেন । মূলত প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক বিলরাউল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গণনার বিবরণী এবং রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক প্রকাশিত গণনার ফলাফলে পার্থক্য বিদ্যমান । দুইজনের মধ্যে একজনের ফলাফলে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি শতভাগ দেখানো হলেও অন্যজনের ঘোষিত ফলাফলে উপস্থিতির হার কম। পরে নৌকার প্রার্থী মো. ফরিদ মিয়াকে ৫২২৯ ভোট এবং লাঙলের প্রার্থী সাইদুল ইসলাম বাবুলকে ৫২৩৫ ভোট অর্থাৎ ৬ ভোট বেশি দেখিয়ে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
এরপর থেকেই জনমনে প্রশ্ন, বিলরাউল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের আওতায় নির্বাচনের পূর্বে যেসকল ভোটার মৃত্যুবরণ করেছেন,কিংবা যারা অসুস্থ,অথবা যারা দেশ-বিদেশে কর্মরত ছিলেন;নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছিলেন তারা সংখ্যায় কতজন। আর তাদের বাদ দিয়ে কেমন করেই বা কেন্দ্রে শতভাগ ভোটার উপস্থিতির হিসাব দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য,গত ১০.০৩.২০২২ ইং তারিখে ঈশ^রগঞ্জের ইউপি নির্বাচন গেজেটভুক্ত হওয়ার পর বিজয়ী চেয়ারম্যানরা ২৮ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শপথ গ্রহণ করেন এবং গত ৫ এপ্রিল মঙ্গলবার মাইজবাগ ইউপি চেয়ারম্যান সংরক্ষিত ও সাধারণ মেম্বারদের নিয়ে প্রথম কর্মদিবসের সূচনা করেন ।
বিলরাউল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে শতভাগ ভোটারের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী ইসলামীয়া কারিগরী ও বিএম কলেজের প্রভাষক শামসুজ্জামান নির্বাচনী মামলার সমন নোটিশ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘আসলে ওই কেন্দ্রে শতভাগ উপস্থিতি দেখিয়ে যে রেজাল্টশীট দেওয়া হয়েছিল, সেটি ভুল ছিল। পরবর্তীতে উপজেলায় গিয়ে সংশোধিত রেজাল্টশীট জমা দেই’।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাইজবাগ ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার মাহবুব আলম নোটিশ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আর আলোচিত কেন্দ্রে শতভাগ ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রিসাইডিং অফিসার আমার কাছে যে রেজাল্টশীট জমা দিয়েছেন তাতে ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখানো হয়েছে’।