প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে সংসদকে অর্থবহ করার জন্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের (এমপি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ।তিনি বলেন, ‘সংসদকে অর্থবহ করুন। আপনারা সরকারের সমালোচনা করতে পারেন। তাতে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। কিন্তু আপনাদের একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে আপনাদের কাজটা হতে হবে দেশ ও জনগণের কল্যাণের জন্য।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে একথা বলেন।উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয়লাভ করেছে। এর বাইরে এবার ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জিতেছেন।
আগামী মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সংসদে ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, সরকারী দলের বাইরে যারা থাকেন তাদের অনেক সুবিধা থাকে। যেকোন বিলের ওপরই কথা বলার সুযোগ থাকে। এখানে অনেক প্রবীণ সংসদ সদস্য আছেন তার ওপর সরকার প্রতিবারই সংসদ নির্বাচনের পর ওরিয়েন্টেশন কোর্সও করিয়ে থাকে।‘কাজেই এটাকে (সংসদ) অর্থবহ করা এবং গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে সবাই ভূমিকা রাখতে হবে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।তিনি বলেন, চক্রান্ত আছে, চক্রান্ত চলবে। জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ কিংবা খালেদা জিয়ার আমলে দেশ এককদমও আগে বাড়েনি। ’৯৬ থেকে ২০০১ আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখনই মানুষ প্রথম উপলদ্ধি করে যে সরকার জনগণের সেবক, জনগণের জন্য কাজ করে। এখন তাঁর সরকারের লক্ষ্য যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছে তাকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করে উন্নয়নটা টেকসই করা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই আপনারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে মানুষের কাছে যা যা ওয়াদা দিয়ে এসেছেন সেগুলো আপনাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু সেখানেও আপনাদের মিতব্যয়ী হতে হবে আর স্বচ্ছতা থাকতে হবে। প্রকল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও যেটা আমাদের দেশের জন্য অর্থবহ সে ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। সেটাও আপনাদের মাথায় রাখতে হবে। আর সংসদে আপনারা আপনাদের ভূমিকা নেবেন। আমাদের বলার কিছু নেই। সবাই আমাদের থেকে দূরে গিয়েও আবার ফিরে এসেছেন। সেটাই হচ্ছে বড় কথা। আপনারা সংসদে বসবেন এবং আপনাদের যে দায়িত্ব সেটা পালন করবেন।
তিনি বলেন, এই নির্বাচন বানচালের আবার যে চক্রান্ত, আবার যে জ্বালাও পোড়াও এদের ওপর ভালভাবে আপনাদের নজর রাখতে হবে। এর একটা উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। কারণ এরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তিতে বিশ্বাস করেনা ঐ দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাস এগুলোই তাদের চরিত্র। কিন্তু এই বাংলাাদেশের মানুষের জীবন নিয়ে আর ভাগ্য নিয়ে আর আমরা খেলতে দেবনা। এই কথাটা যেন সবার মনে থাকে। স্বাধীনতার চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, চক্রান্ত আমাদের বিরুদ্ধে শেষ হয়ে যায়নি। কারণ বাংলাদেশ যতটা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশ যতটা উন্নত হবে, যারা আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী ছিল তারা কিন্তু এটা মেনে নিতে পারে না। এ সম্পর্কে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের উক্তি ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয় আমার ব্যক্তিগত পরাজয়’ কিংবা তার অপর উক্তি ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি হবে’ এর উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশকে আর কেউ ‘বটমলেস বাস্কেট’ বলতে পারেনা। দেশে আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আর তাদের দেশে দারিদ্র হলো ১৭ ভাগ। যদিও আমার লক্ষ্য ছিল আরো দুইভাগ কমানো কিন্তু কোভিড-১৯ আসাতে আমরা থমকে গেলাম। তবে, ভবিষ্যতে এটা করতে হবে। ওদের থেকে এক শতাংশ হলেও আমাদের কমাতে হবে। আমি সকল নির্বাচিত প্রতিনিধিকেই বলছি এটা আমাদের অর্জন করতেই হবে। হত দরিদ্র ২৫ ভাগ থেকে ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কেউ হত দরিদ্র থাকবে না। এ সময় তাঁর সরকারের বিনামূল্যে গৃহহীন ভূমিহীনকে ঘর নির্মাণ করে তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার উল্লেখ করে তিনি কারো এলাকায় ভূমিহীন-গৃহহীন থাকলে তাঁর তালিকা দিতে বলেন যাতে সরকার তাদের পুনর্বাসন করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিকে আমি প্রশ্রয় দেবনা। মিলিটারি ডিক্টেটররা দীর্ঘদিন দেশ শাসন করার ফলে রন্ধ্রে রন্ধ্রে এটা ঢুকে গেছে। সেখান থেকে বের করে আনা এক কঠিন কাজ। তারপরেও ধীরে ধীরে মানুষকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে সে জায়গায় আনতে হবে।
তাঁর সরকার দুর্নীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে বলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুসহ অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পেরেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বিএনপি আমলে বিশ্বব্যাংক বিদ্যুৎ এবং সড়কে প্রদেয় অর্থ দুর্নীতির অভিযোগে বন্ধ করেছিল কিন্তু তদের গলায় জোর না থাকায় সততা না থাকায় তারা প্রতিবাদ করতে পারেনি। যেটা পদ্মা সেতু তৈরীর সময় বিশ্ব ব্যাংকের ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগকে তাঁর সরকার চ্যালেঞ্জ জানাতে পেরেছিল এবং কানাডার ফেডারেল কোর্টে অবশেষে প্রমাণ হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন দুর্নীতি হয়নি, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমার দেশের সম্মান, আমার মানুষের সম্মান, আমার জাতির সম্মান। কারণ মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা বিজয়ী হয়েছি। সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের সম্মান এবং মর্যাদাটা ধরে রাখতে হবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।