18.6 C
Sydney

বাংলাদেশসেবার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সেবার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশের তারিখঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশকে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্বমানের ‘স্মার্ট পুলিশ’ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে সেবার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ছয় দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা অটুট রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করুন।’ করোনার কারণে দুই বছরের ব্যবধানে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে তাদের সম্পর্কে জনগণের ভীতি দূর করে তাদের (পুলিশ) বাহিনী হিসেবে জনগণের সেবা করতে এবং ভালো কাজগুলো চালিয়ে যেতে বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একটি দক্ষ এবং বিশ্বমানের ‘স্মার্ট পুলিশ’ গড়ে তোলা।’
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ হবে জনগণের পুলিশ, শোষকের পুলিশ নয়।

তিনি বলেন, আমাদের সরকার পুলিশ বাহিনীকে ইতোমধ্যেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন সরবরাহ করেছে। পুলিশের গতিশীলতা ত্রিমাত্রিক পর্যায়ে উন্নীতকরণে ইতোমধ্যে রাশিয়া থেকে ২টি হেলিকপ্টার ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ এভিয়েশন ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।

প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা জিপে করে বাংলাদেশ পুলিশের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। পুলিশের বিভিন্ন দল বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে।

পরে তিনি ১১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) সাহসিকতা, রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) সাহসিকতা, বিপিএম সেবা এবং পিপিএম-সেবা প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন তাকে স্বাগত জানান। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
সরকার প্রধান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। তার সুফল জনগণ এখন ভোগ করছে। বঙ্গবন্ধু সর্বদা এ দেশের পুলিশকে ‘জনগণের পুলিশ’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন এবং আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের পুলিশ বাহিনী এখন জনগণের পুলিশ হিসেবেই তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আগে পুলিশের নাম শুনলে মানুষ ভয় পেত। এখন জানে পুলিশ সেবা দেয় ও তাদের পাশে দাঁড়ায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের তথা জনগণের আস্থা অর্জন করা যেকোন বাহিনীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনারা তা করে যাচ্ছেন। অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই আপনারা এই সেবা করে যাবেন। জনগণের মনে পুলিশের প্রতি যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেটা যেন অক্ষুন্ন থাকে। আমরা চাই, আমাদের পুলিশ বাহিনী জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী হিসেবেই জাতির পিতার সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করবে।

তিনি বলেন, যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপদ আপদে পুলিশ সবসময় মানুষের পাশে আছে। পাশাপাশি মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগেও পুলিশের ভুমিকা রয়েছে। মানুষের জান-মাল বাঁচাবার জন্য নিজের জীবনকেও উৎসর্গ করেন। যে কোন ঝুঁকি নিতে পিছপা না হওয়াটাই পুলিশের কাজ এবং সেটা তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই করে যাচ্ছেন। এজন্য পুলিশ বাহিনীকে তিনি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপি-জামাতের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার সময় পুলিশ সদস্যদের বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, সে সময় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ অগ্œিদগ্ধ এবং ৫শ’ মানুষ নিহত হয়েছিল। পুলিশ বাহিনীও রেহাই পায়নি। ২৯ জন পুলিশ সদস্যও নির্দয় নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এবং অনেকে আহত হন। খুব নির্দয়ভাবে পুলিশকে বিএনপি-জামাত-শিবিররা যেভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করেছে তা পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না। এদের হামলায় সাড়ে তিন হাজার বাস-ট্রাক, ১৯টি ট্রেন, ৯টা লঞ্চ পুড়ে ধ্বংস হয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাংচুর করে এবং ৬টি ভূমি অফিস সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের সদস্যগণ জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- রুখে দিয়েছিল এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে। এ ধরনের জঘন্য ঘটনা বাংলাদেশে যেন আর না ঘটে সে বিষয়েও তিনি সকলকে সতর্ক করেন। জনগণের সাথে থেকে এটা প্রতিরোধ করার জন্য তিনি পুলিশ বাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি জঙ্গি প্রতিরোধে পুলিশ সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে হলিআর্টিজন বেকারির জঙ্গি হামলার ঘটনায় আত্মাহুতিদানকারি দু’জন পুলিশ সদস্যকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশকে জঙ্গিবাদ থেকে রক্ষায় সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছে এবং পুলিশ বাহিনী জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক, চোরাচালানি বা মানুষ পাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের পুলিশ বাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এজন্য পুলিশের বিশেষ করে মহিলা কন্টিনজেন্ট আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও ভূয়শী প্রশংসা পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ ব্যবহার করে এখন খুব সহজেই বিপদাপন্ন মানুষজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে। জনগণ ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের সেবা পাচ্ছে এই ‘৯৯৯’ ব্যবহার করে। তিনি কক্সবাজারে রেড়াতে এসে হারিয়ে যাওয়া একদল ছাত্রকে ’৯৯৯’ এ ফোন করার পর উদ্ধারের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সেবা প্রদান সহজ করতে প্রতিটি থানায় নারী-শিশু-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্ক স্থাপন করেছে, নারীবান্ধব বিভিন্ন অ্যাপস্ চালু করেছে। এছাড়া, অনলাইন জিডি কার্যক্রম ও অন্যান্য অনলাইনভিত্তিক সেবা ও মোবাইল অ্যাপস্ প্রবর্তনের মাধ্যমে পুলিশের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে।

পুলিশের উন্নয়নে তাঁর সরকারের নানা পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ইতোমধ্যে পুলিশে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন করেছি। বাংলাদেশ পুলিশে ইতোমধ্যে ডিএনএ ল্যাব, আধুনিক ফরেনসিক ল্যাব, অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন (এএফআইএস) এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রতিটি বিভাগীয় সদর দপ্তরে এ ধরনের ল্যাব স্থাপন করা হবে।

তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ মোকাবেবলায় আমরা সিআইডিতে একটি ‘সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপন’ করেছি। এছাড়া, ডিএমপির ‘সিটিটিসি’-সহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করছে। অচিরেই আমরা বাংলাদেশ পুলিশে একটি পূর্ণাঙ্গ সাইবার পুলিশ ইউনিট স্থাপন করব এবং জেলা পর্যায় পর্যন্ত এ ইউনিটের শাখা বিস্তৃত করা হবে।

তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে এবং দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনের ঘটনা না ঘটলে বাংলাদেশকে তাঁর সরকার আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতো। তারপরও ২০৪১ নাগাদ তাঁর সরকার এই বাংলাদেশকে জ্ঞানে, বিজ্ঞানে এবং প্রযুক্তি জ্ঞানে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছে।

সর্বশেষ

spot_img

জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

ডেইলি মার্ক নিউজে জনপ্রিয়

ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অংশগ্রহণে ব্রেমেনে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উদযাপন

মো. নাজিম উদ্দীন, ব্রেমেন প্রতিনিধি: বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা...

উজবেকিস্তানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক স্বার্থে উজবেকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ...

প্রধানমন্ত্রী আগামী সেপ্টেম্বরে ভারত সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে : মোমেন

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী...

অস্ট্রেলিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির কোগরার ফ্রাই রিজার্ভ ও মিন্টুতে আজকের ঈদুল ফিতরের...

ডেইলি মার্ক নিউজে সর্বশেষ
Latest

ইসরাইলের হামলায় ১৩ শিশুসহ নিহত ৩০

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা রোববার জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূখ-ের উত্তরাঞ্চলে...

ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রস্তুত বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রস্তুত...

লেবাননের পূর্বাঞ্চলে ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪০

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার প্রধান শহর বালবেকসহ দেশটির...

দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউস ট্রাম্পের

বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে তাক লাগিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে...