ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে ভেসে আসা রোহিঙ্গাদের একটি নৌকা টেনে নিচ্ছেন স্থানীয় গ্রামবাসী-এএফপি
কয়েক সপ্তাহ ধরে সাগরে ভাসা রোহিঙ্গাবোঝাই একটি হালকা নৌযান ডুবে যাওয়ার পর ১৮০ রোহিঙ্গার মৃত্যুর আশঙ্কা করছিল জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের সমুদ্র উপকূলে ভেসে আসা সেই নৌযানটি থেকে ২০ রোহিঙ্গার মৃত্যুর খবর দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাটি।
রয়টার্স জানিয়েছে, শত শত নির্যাতিত মুসলমান বহনকারী নৌকাগুলো ইন্দোনেশিয়ায় অবতরণ করেছে এবং অন্যরা ভারত মহাসাগরে ভেসে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় দুর্যোগ সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে একটি নৌকা ১৭৪ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে উপকূলে ভেসে গেছে, যাদের বেশিরভাগই পানিশূন্য, ক্লান্ত এবং জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে সাগরে কয়েক সপ্তাহ পরে।
রোহিঙ্গাদের সহায়তা প্রদানকারী আরাকান প্রজেক্টের ক্রিস লেওয়া বলেন, নৌকাটি আগের মতোই নিখোঁজ এবং ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল।
ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের পিডিতে একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন
ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের পিডিতে একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন
ইউএনএইচসিআর সোমবার বলেছে, ২০২২ সাল রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় এক দশকের মধ্যে সমুদ্রে সবচেয়ে মারাত্মক বছরগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে, কারণ বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে তাদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যক মরিয়া হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত হয়ে আসছে। বছরের পর বছর ধরে অনেকে নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে শান্ত থাকা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ডের মতো দেশে এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পালিয়ে গেছে।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মারাত্মক দমনপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ২৭ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।
অধিকার গোষ্ঠীগুলো শিবির ছেড়ে যাওয়ার সংখ্যায় উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের প্রায় ৫০০ জন থেকে সংখ্যাটি এই বছর আনুমানিক ২ হাজার ৪০০ হয়েছে৷ বৃহত্তর দেশত্যাগের কারণ কী তা স্পষ্ট নয়। কিছু অ্যাক্টিভিস্ট ধারণা করছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আশপাশে কোভিড বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া বা রোহিঙ্গাদের পছন্দ কোনো গন্তব্য একটি কারণ হতে পারে।
উমর ফারুখ নামের এক রোহিঙ্গা ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা এখানে সবচেয়ে বড় বাংলাদেশ শরণার্থী শিবির থেকে এসেছি এই আশা নিয়ে যে ইন্দোনেশিয়ান জনগণ আমাদের শিক্ষার সুযোগ দেবে।’
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই অঞ্চলের চারপাশে নৌকা অবতরণ এবং উদ্ধারের একটি সিরিজের মধ্যে এই দলটিই সর্বশেষ। তাদের সাথে আরো ৫৭ জন রোহিঙ্গা ছিল যারা রবিবার আচেহ পৌঁছেছিল।
চলতি মাসের শুরুতে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী ১০৪ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে। অপরদিকে থাই কর্তৃপক্ষ একটি ভাসমান জলের ট্যাঙ্কে আটকে থাকা আরও ছয়জনকে উদ্ধার করেছে।