প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে তা নিশ্চিত করাই তার দলের একমাত্র লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটাই লক্ষ্য যে, এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলা খেলতে না পারে।
গত ২৪ ডিসেম্বর দলের ২২তম কাউন্সিলের পর সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতিমন্ডলীর প্রথম বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের জনগণ অনেক কষ্ট করেছে এবং ভবিষ্যতে তাদের আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের একমাত্র লক্ষ্য দেশের মানুষ একটি সুন্দর, উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবন পাবে এবং আমরা তা করতে চাই।’
আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়ে গেছে এবং দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির বাকি অংশ পূরণ করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সংগঠন (আওয়ামী লীগ) আমাদের বড় শক্তি এবং এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’
টানা দশমবার আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া শেখ হাসিনা বলেন, সংগঠনটি (আওয়ামী লীগ) শক্তিশালী থাকলে আমরা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হব। তাহলে সরকার পরিচালনা এবং দেশের উন্নয়ন করা কঠিন কাজ হবে না।
তিনি বলেন, ‘এটাই হচ্ছে বাস্তবতা এবং আমরা এই বাস্তবতা নিয়ে আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।’
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে একটি ডিজিটাল দেশে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে, শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য ‘২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা।’
তিনি আরো বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে সমস্ত মানুষই হবে স্মার্ট মানুষ, ই-পিপল। আমরা এটা করতে চাই।’ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে এবং এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে মেট্রোরেল, যা একটি বৈদ্যুতিক ট্রেন, সেটি ২৮ ডিসেম্বর চালু করা হবে।’ কিন্তু, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে এসব কিছুই হতো না।’
সোমবার কর্ণফুলী নদীর তলদেশে একটি টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় হচ্ছে পদ্মা সেতু যা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
‘আমরা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি এবং ঘোষণা করেছি যে, আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে এটি করব। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আমরা কারও কাছ থেকে টাকা নিইনি, আমরা সেই যোগ্যতা অর্জন করেছি,’ যোগ করেন তিনি।
কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব ধাক্কা না আসলে আমরা আজ বাংলাদেশকে আরও অনেক দুর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতি এ পর্যন্ত যা পেয়েছে, তা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে পেয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সালের পরও বাংলাদেশ এক ধাপ এগোয়নি উল্লেখ করে বাংলাদেশের জনগণকে নির্যাতিত ও বঞ্চিত করা হয়েছে কারণ তাদের ভোটাধিকার নেই, খাদ্য নেই, বস্ত্র নেই, শিক্ষা নেই, চিকিৎসা নেই এবং রাস্তা এবং অন্যান্য কোন কিছুরই উন্নয়ন নেই।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের মানুষ বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পেরেছে।’ তিনি বলেন, ‘আজ ফিরে এসেছে জয় বাংলার স্লোগান এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। জিয়াউর রহমান ও অন্যান্য সরকারের আমলে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সবাই অন্ধকারে আবদ্ধ ছিল এবং আওয়ামী লীগ তাদের আলোতে নিয়ে এসেছে।’
সরকার প্রধান বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তা আওয়ামী লীগের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে।
তিনি বলেন ‘আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি এবং আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সেই পরিকল্পনা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, তার সরকার গৃহহীনদের জমি ও ঘর দিচ্ছে এবং সবাইকে দেবে। ‘দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাঁচটি মৌলিক অধিকার- খাদ্য, বস্ত্র, ঘর, শিক্ষা ও চিকিৎসা, যা সংবিধানে বলা হয়েছে, সরকার তা নিশ্চিত করেছে এবং জনগণের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে আরও ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন বিশ্ব বাংলাদেশকে মর্যাদার সঙ্গে দেখছে এবং বাঙালিরা যেখানেই যায় সেখানেই সম্মান পায় এবং এটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগের কারণে।’