র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নীতির পরিবর্তন সংক্রান্ত ধারণা নাকচ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তিনি বলেছেন, ‘এই নীতি ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দায়বদ্ধতা ও সংস্কার হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার সেন্টার ফর গভর্নমেন্ট স্টাডিজ আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
‘আমাদের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি’ উল্লেখ করে র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পিটার ডি হাস বলেন, ‘এটি আমরা সরকারকে এবং প্রকাশ্যে উভয়ভাবেই বলেছি। এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য কাউকে শাস্তি দেওয়া নয়, বরং তাদের ব্যবহার পরিবর্তন করা।’
অনুষ্ঠানে পিটার ডি হাস শ্রম অধিকার, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতি, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং বিনিয়োগ-বাণিজ্যসহ যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন। তবে তার কাছে বেশির ভাগ প্রশ্নই ছিল বাংলাদেশের নির্বাচন এবং আসন্ন নির্বাচন যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে।
পিটার হাস এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি কূটনৈতিক শিষ্টাচার সম্পর্কে অবহিত যে, অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা যায় না। আমি এটাও অবহিত যে, আন্তর্জাতিক মানদন্ড মেনে নির্বাচন করার বিষয়ে অনেক পরামর্শ ও সুপারিশ রয়েছে। আমি যখন নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করি, আমি ওই পরামর্শ বিষয়ে কথা বলি এবং আমি বলতে চাই যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক মানদন্ড অর্জনে সহায়তা করতে চায়।’
‘আমরা বহুমুখী সমাজ দেখতে চাই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের করণীয় বা সংবিধান সংশোধনী বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।’
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে পিটার ডি হাস বলেন, আমি জানি না। সাধারণভাবে পেশাদার কূটনীতিকরা ‘হতে পারে’ এমন কোনো বিষয়ে মন্তব্য করেন না। বাংলাদেশের জনগণ ঠিক করবে সুষ্ঠু ও স্বাধীন নির্বাচনের বিষয়। ‘এমন কোনো নির্বাচন নেই যেখানে সহিংসতা ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারে’ বলেন তিনি।
শ্রম অধিকারের বিষয়ে হাস বলেন, ‘রপ্তানিমুখী শিল্পের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এখনও উদ্বেগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায়, বাংলাদেশে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ থাকুক। এতে করে তারা নিজেদের অধিকার আদায়সহ বিভিন্ন ইসু্যতে দরকষাকষি করতে পারবে। গুমের বিষয়ে তিনি জানান, গুমের অভিযোগ তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন প্রক্রিয়া দেখতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের সংখ্যা উলেস্নখযোগ্যভাবে পরিবর্তন ঘটেছে। এটি খুব ভালো সংকেত।’
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘গণতন্ত্র একটি সংগ্রাম। প্রতিনিয়ত এটি নিয়ে কাজ করতে হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। আমরা গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করছি।’
ইন্দো-প্যাসিফিক ইসু্যতে পিটার হাস বলেন, ‘এটি এমন একটি কৌশল, এখানে যোগ দেওয়া না দেওয়াটা কোনো বিষয় নয়। এটি কোনো ক্লাব নয়। এটি কতগুলো ভিত্তির ওপর গড়ে উঠেছে, যেমন- মুক্ত, নিরপেক্ষ, প্রাণবন্ত এবং সমৃদ্ধ নীতির ওপর। প্রত্যেক দেশেরই তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। বাংলাদেশ এটিকে সমর্থন করছে না, আমি বিষয়টাকে এমনভাবে দেখছি না। তবে এতে বাংলাদেশের যোগ দেওয়া না দেওয়াটা কোনো বিষয় নয়। এটি বাংলাদেশ কীভাবে নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।’
বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশে একটি প্রতিযোগিতা রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা উপযুক্ত বাজার খুঁজবেন। সেক্ষেত্রে যেখানে নিরাপত্তা থাকবে, নিরাপদ পরিবেশ থাকবে; সেটাই তারা বেছে নেবেন।’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ডক্টর বেনজীর আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিলস্নুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।