পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন, দ্রুত টেকসই প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান।
জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত নয়েলিন হেইজার বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তার দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎ কালে রোহিঙ্গা সমস্যা এবং এর সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হয়।
মানবিক বিবেচনায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ দিন অবস্থানের কারনে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক, পরিবেশসহ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবাসনই সমস্যার একমাত্র সমাধান বলে নয়েলিন হেইজারের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ
করেন।
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট অচলাবস্থার কারণে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিরাজমান হতাশা তাদেরকে আইনবিরোধী কর্মকান্ডসহ উগ্রবাদে সম্পৃক্ত করতে পারে বলে ড. আব্দুল মোমেন শংকা প্রকাশ করেন। এমনটা হলে তা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে উঠবে বলে জানান তিনি।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহলের মনোযোগ ধরে রাখতে এবং রাখাইনে প্রত্যাবাসন সহায়ক পরিবেশ তৈরী করতে জাতিসংঘ, আসিয়ান এবং মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশসমূহে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তবে, এক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারের ভূমিকাই মুখ্য বলে তিনি স্বীকার করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চলমান দ্বিপাক্ষিক ও ত্রিপাক্ষিক প্রচেষ্টার বিষয়ে বিশেষ দূতকে অবহিত করেন। মিয়ানমারে সৃষ্ট এই সমস্যার সমাধান একমাত্র মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মানবিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে যে সকল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তা তাদের প্রত্যাবাসনের পরে রাখাইন সমাজে টেকসই সহাবস্থানে সহায়ক হবে বলে উল্লেখ করেন মোমেন।
মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত এর আগে মঙ্গলবার কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তিনি বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত মানবিক কর্মকান্ডের ভয়ূসী প্রশংসা করেন। ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের আগ্রহ ব্যক্ত করেছে বলে বিশেষদূত পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে অবহিত করেন।
রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে নিরাপদ পরিস্থিতি তৈরী ও তাদের উপর পরিচালিত অমানবিক নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যাক্তিদের আন্তর্জাতিক বিচারিক কাঠামোর মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিতেরও দাবি জানায়।
উত্থাপিত দাবি অর্জিত হলে রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জন সহজ হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
উত্তর রাখাইনে আসিয়ান ও জাতিসংঘের অর্থবহ উপস্থিতি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গুরুত্ত্বের সাথে উপস্থাপনের জন্য বিশেষদূতকে অনুরোধ করেন। এ অঞ্চলে তার কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার বিষয়কবিশেষদূত নয়েলিন হেইজার বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সূত্র বাসস