23.8 C
Sydney

টপ নিউজরোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরো সক্রিয় হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরো সক্রিয় হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশের তারিখঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর নিজস্ব বিপুল জনসংখ্যা এবং তার ওপর মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বোঝা বহন করা বাংলাদেশের জন্য কতটা কঠিন তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপলব্ধি করা উচিত।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য বড় বোঝা। করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সব দেশই জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। কাজেই সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত ১০ লাখের ও বেশি রোহিঙ্গাদের বোঝা বহন করা যে কতোটা কঠিন তা সকলের উপলদ্ধি করা উচিত।’

শেখ হাসিনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নব-নির্মিত ৮ তলা ভবন উদ্বোধন এবং ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে এ কথা বলেন।

তিনি বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নব-নির্মিত ভবনের হলরুমে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং ইতোমধ্যে চার বছর কেটে গেছে।

এ ছাড়াও, রোহিঙ্গাদেরও আশ্রয় ক্যাম্পের পরিবর্তে একটি ভাল জায়গায় বসবাসের মানবাধিকার রয়েছে এবং তাদের সন্তানরাও জন্মভূমিতে একটি ভাল পরিবেশে যাতে বেড়ে উঠতে পারে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপলব্ধি করা উচিত।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে সরবরাহ চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সারা বিশ্বের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে বিরাট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ঠিক সেই সময় রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে, আরও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

রাশিয়ার উপর যুরাষ্ট্রের নিষেধাঞ্জা আরোপের ফলে পণ্য প্রাপ্তিতে বিরাট বাধার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু তাই নয় পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে এবং প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী প্রাপ্তির ক্ষেত্রটাও ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, এই প্রভাবটা শুধু বাংলাদেশে নয়। আমি মনে করি আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে সারা বিশ্বই এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ কিন্তু কষ্ট ভোগ করছে। উন্নত দেশগুলোকে বিশেষভাবে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। আমেরিকার যে নিষেধাঞ্জা দিচ্ছে তাতে তাদের দেশের লোকও কষ্ট পাচ্ছে। সেদিকেও তাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

এই নিষেধাঞ্জা যাদের বিরুদ্ধে দেয়া হচ্ছে তারা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রশ্ন উত্থাপন করে শেখ হাসিনা বলেন, তার চেয়ে সব দেশের সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ সকল দেশের মানুষই কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে। নিম্ন আয়ের দেশ সব দেশের মানুষই কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত বছর ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। এ বছর এই পদকের জন্য পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি মনোনীত হন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়েক হাজার বাংলাদেশি সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্র ইউক্রেন ছেড়ে পোল্যান্ড ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে আশ্রয় নেয়ার প্রেক্ষাপটে সুলতানা লায়লা হোসেন অসাধারণ অবদান রাখেন। তেমনিভাবে ইতো নাওকি’ও ঢাকা-টোকিও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজয়ীদের পদক প্রদান করেন।
ড. মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ী কূটনৈতিক সুলতানা লায়লা হোসেন এবং বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ‘বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধু কর্নার’ নামের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং বিদেশে বাংলাদেশের সকল মিশনের জন্য অভিন্ন ওয়েবসাইট আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেন।

পররাষ্ট মন্ত্রণালয়ের নব-নির্মিত ৮ তলা ভবন এবং ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ এর ওপর একটি ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারি থেকে কেবল আমরা একটু উদ্ধার হচ্ছিলাম। তখনই এই যুদ্ধ আর নিষোধাঞ্জা আরোপ সত্যিই আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে।

নিষেধাঞ্জা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করি এক দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেওয়া মানবাধিকার লংঘনের শামিল। তাই এখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরে আসা মনে হয় বাঞ্চনীয়। আমি মনে করি সকলে সেটাই চাইবে।’

সরকার প্রধান বলেন, নিষেধাঞ্জা দিয়ে কোন দেশ বা জাতিকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেটা নিশ্চয়ই এখন দেখতে পাচ্ছেন। তার প্রভাব নিজের দেশের উপরও পড়ে। কাজেই এই নিষেধাঞ্জা তুলে দিয়ে পণ্য পরিবহন সহজ করা একান্ত জরুরী। যুদ্ধ আপনারা করতে থাকেন, কিন্তু পণ্য পরিবহন আমদানি রপ্তানি যাতে সহজভাবে হয় আর সাধারণ মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

তিনি বলেন, খাদ্য মানুষের সবচেয়ে বড় চাহিদা। সেখানে অনেক উন্নত দেশও সমস্যায় পড়ে গেছে। প্রত্যেকের জীবন দুর্বিসহ হয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে আমরা চেষ্টা করছি উৎপাদন বাড়ানোর। আমাদের খাদ্য যেন আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি সেই ব্যবস্থাও আমরা করবো। যদি অন্য কাউকে সাহায্য করতে পারি সেটাও করবো। কিন্তু উৎপাদন করতে গেলে আমাদের সার প্রয়োজন, ডিজেল প্রয়োজন, বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন সেটা আমরা পাচ্ছি না। এভাবে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কি অর্থ থাকতে পারে? আমি ঠিক জানি না। এখানেও, আমি বলবো যে এক দিকে বলতে গেলে এটাও তো মানবাধিকার লংঘনের শামিল। মানুষের যে অধিকার সে অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে শান্তি চুক্তি, ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি, ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ‘স্থল সীমানা চুক্তি’র আওতায় শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় এবং দেশের বিশাল সমুদ্র সীমায় অধিকার অর্জনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে সমস্ত সমস্যাগুলো ছিল আমরা কিন্তু সকলের সাথে আলোচনার মাধ্যমেই সেগুলো সমাধান করে আমাদের দেশের মানুষের অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি।

গত ২৫ জুন তাঁর সরকার বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু’ উদ্বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অর্থনৈতিক কূটনীতিকে এখন গুরুত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীটা এখন একটা গ্লোবাল ভিলেজ এবং একে অপরের উপর নির্ভরশীল। আমাদের সেভাবেই কাজ করতে হবে। সকলের সাথে মিলেই আমরা কাজ করবো যেন মানুষের উন্নতি হয়।

সূত্র বাসস

সর্বশেষ

spot_img

জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

ডেইলি মার্ক নিউজে জনপ্রিয়

ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অংশগ্রহণে ব্রেমেনে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উদযাপন

মো. নাজিম উদ্দীন, ব্রেমেন প্রতিনিধি: বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা...

উজবেকিস্তানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক স্বার্থে উজবেকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ...

প্রধানমন্ত্রী আগামী সেপ্টেম্বরে ভারত সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে : মোমেন

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী...

অস্ট্রেলিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির কোগরার ফ্রাই রিজার্ভ ও মিন্টুতে আজকের ঈদুল ফিতরের...

ডেইলি মার্ক নিউজে সর্বশেষ
Latest

রোহিঙ্গা বিষয়ে আসিয়ানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সিঙ্গাপুরের প্রতি ঢাকার আহ্বান

পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে টেকসই...

একনেকে ১,২২২.১৪ কোটি টাকার ৪টি প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ মোট চারটি...

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিএনপি’র সমাবেশ শুরু

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত...

মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দলের

বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং...