বন্যাদুর্গত মানুষের দিকে না তাকিয়ে সরকার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসব নিয়ে ব্যস্ত বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর ভাটারায় ঢাকা উত্তরের কয়েকটি ওয়ার্ড সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি এই দুঃসময়ে, এই দুর্যোগের সময়ে, জনগণের এই কষ্টের সময়ে সরকার ব্যস্ত হয়ে আছে উৎসব নিয়ে। তারা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে এতো ব্যস্ত যে, তাদের মানুষের কল্যাণের দিকে তাকানোর সময় নেই, মানুষের কষ্টের দিকে তাকানোর সময় নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দাবি করছি বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হোক এবং এই সমস্ত অঞ্চলের জনগণের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক, কোনো বিলম্ব না করে। আমরা অবিলম্বে সরকারকে বন্যাকবলিত এলাকাগুলো গিয়ে দুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করে এবং বন্যা যেন না হয় তার ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
বন্যা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সারা দেশে আজকে বন্যার ধারালো ছোবল। সিলেট, সুনামগঞ্জ থেকে শুরু করে উত্তরে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ সমস্ত অঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। গতকালের যে নিউজ সেই নিউজ হচ্ছে ফারাক্কার সকল বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে এবং ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা সব নদীর পানি এখন বাড়তে থাকবে। এদেশের মানুষকে ভাসিয়ে দেবে, তাদের বহুদিনের যে কষ্ট করা যে ফসল সেই ফসলকে নষ্ট করবে, তাদের বাড়ি-ঘর নষ্ট করবে, তাদের গবাদিপশু নষ্ট করবে, তাদের সমস্ত সম্পদ ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে।’
বন্যা মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেনো এই বন্যা? ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে, সেজন্য বন্যা আসতে পারে। কিন্তু সেই বন্যাকে মোকাবিলার জন্য বা সেই বন্যায় যাতে কম ক্ষতি হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। তারা গত এক যুগেও ভারতের সঙ্গে যেসব অভিন্ন নদী রয়েছে, সেই অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টনের যে চুক্তি, সেই চুক্তি করতে সক্ষম হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে বহুদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি চুক্তির মূলা দেখানো হচ্ছে। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত করা হয়নি। ফারাক্কার পানি হঠাৎ করেই যে তারা (ভারত) গেট খুলে দেয়, তখন যে পানির ঢল আসে সেই ঢল সামলানো সম্ভব হয় না। আজকে সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে একই ঘটনাগুলো ঘটছে। আজকে এটার জন্য সম্পূর্ণভাবে এই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এবং তার জনগণের প্রতি যে অবহেলা সেটাই প্রমাণ।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বন্যা হবে না কেনো? যে সমস্ত হাওর ও নদীগুলো বাঁধ এবং ব্রিজ দেওয়া হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। সেখানে এতো দুর্নীতি হয়েছে যে, সমস্ত বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে এবং নতুন করে যেসব রাস্তা তৈরি করা হয়েছে তা ভেঙে যাচ্ছে। সব কিছু সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আজকে দেশে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এই নির্বাচন কমিশনকে মানি না। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব পরিষ্কার করে বলেছেন যে, আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না যদি সেটা নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে না হয়। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, আপনাদের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই। আপনারা অবিলম্বে পদত্যাগ করুন এবং একটা নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। সংসদকে বাতিল করে দেন। এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের অধীনে একটা জবাবদিহিমূলক নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে নতুন পার্লামেন্ট গঠন হবে, নতুন সরকার হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সেই লক্ষ্যে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকলকে শক্তিশালী হয়ে, প্রতিবাদী হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের যে সংগঠন তৈরি হচ্ছে, সেই সংগঠনের মধ্য দিয়ে আমাদের আন্দোলন আরো শক্তিশালী হবে এবং সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর গণঐক্য তৈরি করে এই সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে কিছু প্রস্তাব করা হছে। সেটা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ। আমি বিস্মিত হয়েছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা প্রতিষ্ঠান, শতবর্ষ ধরে যে বিশ্ববিদ্যালয় এই দেশে সবচাইতে মেধাবী মানুষদেরকে শিক্ষা দিয়ে সমাজে পাঠিয়েছে, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, সাহিত্যের ক্ষেত্রে, সামাজের বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্বের ক্ষেত্রে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রস্তাব করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রিশ হাজার শিক্ষার্থী আছে- এর মধ্যে যারা ধনী তাদের জন্য বিশেষ ফি অর্থাৎ বেশি টিউশন ফি দিতে হবে। কারণ তারা ধনীর সন্তান।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই ক্যারেক্টারের নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইজ এ সেন্টার অব এক্সিলেন্স; গোটা দেশের সবচাইতে ভালো ছাত্ররা এখানে ভর্তি হয়। এখানে ভর্তি হয়ে তাঁরা তাদের শিক্ষা শেষ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্ব দেয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় তাহলে তো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারত। এখানে আমাদের জনগণের ট্যাক্সের টাকা, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমরা পাবলিক ইউনিভার্সিটি বলি সেগুলোতে অর্থ দেওয়া হয় তা পরিচালনার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ আজকে সেই চরিত্রটাকে নষ্ট করে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করবার হীন চক্রান্ত করছে। আমরা এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করছি, তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
৩৯ নং ওয়ার্ড আহ্বায়ক এসএম কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই সম্মেলনে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহানগর উত্তর বিএনপির আবদুল আলি নকি, আতিকুল ইসলাম মতিন, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এজিএম শামসুল হক, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, মোয়াজ্জেম হোসেন মতি, আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, আখতার হোসেন, মোস্তফা জামাল প্রমুখ।