ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন আজ বলেছেন, বাংলাদেশে আবহমানকাল থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকলেও মাঝেমধ্যেই কিছু দুষ্টচক্র এই সৌহার্দ্যে ফাটল ধরাবার অপচেষ্টা চালায়।
তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অপচেষ্টাকারীদের কালো হাত ভেঙ্গে দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য চলে আসছে। মাঝেমধ্যে কিছু দুষ্টচক্র আমাদের সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যে ফাটল ধরাবার অপপ্রয়াস চালিয়েছে এবং এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দুষ্কৃতকারীদের কালো হাত ভেঙে দিতে পারি।’
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন আজ দুপুরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সভাকক্ষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষা এবং সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক ও নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে ওলামা-মাশায়েখ ও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় একথা বলেন।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষের মাঝে সংস্কারের প্রবল আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে এবং মানুষের সেই আকাক্সক্ষার প্রতিফলনও তারা রাষ্ট্রকাঠামোতে ঘটাতে চান বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের মাঝে সংস্কারের প্রবল আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে। আমরা রাষ্ট্র কাঠামোতে মানুষের সেই আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে চাই।
তিনি আরও বলেন, বিতর্ক সৃষ্টি হয়- এরূপ কোন কাজে হাত দেওয়া হবে না। কারণ, এতে সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি বৈচিত্রময় দেশ।
এদেশে নানা ধর্মের লোক থাকবে। গীর্জায় ঘন্টাধ্বনি হবে, মন্দিরে উলুধ্বনি হবে, মসজিদ হতে আযানের ধ্বনি উচ্চারিত হবে- আমরা এরূপ সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে চাই। যতদিন দায়িত্বে আছি, ততদিন আমি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সকল ধর্মাবলম্বীর পাশে থাকব।
তিনি বলেন, পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ ও সহানুভূতির মাধ্যমে আমরা কাছাকাছি আসতে পারি। আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি যেমন আছে, তেমন বিভাজনও আছে। আমাদেরকে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
ড. খালিদ বলেন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক ও নারী নির্যাতন- এগুলো অপরাধ। ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সকল ধর্মেই এগুলো নিষিদ্ধ। এ সকল ব্যাধি প্রতিরোধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি।
ধর্ম উপদেষ্টা দেশের উন্নয়নে এ সকল সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।
ড. খালিদ আরো বলেন, আমি রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমার মন্ত্রণালয়কে পরিচালনা করছি। আমি আগামী দিনেও একইভাবে এটা পরিচালনা করে যাব। অতিমাত্রায় দলীয়করণ করে ইসলামিক ফাউ-েশনকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। আমি এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চাই।
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য কিছু মানুষ সুযোগের অপেক্ষায় আছে। তারা যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে। এদের ব্যাপারে আমাদেরকে সোচ্চার হতে ও সতর্ক থাকতে হবে। পূজা মন্ডপের নিরাপত্তায় কমিটি গঠন করতে হবে। এ সকল কমিটিতে স্থানীয় কমিউনিটির লোকজনকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন- রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আলমগীর হোসেন, স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক পারভেজ রায়হান, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অব গভর্নেন্স সাবেক গভর্নর মাওলানা জামাল উদ্দিন সন্দীপী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান সিকদার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।
এছাড়া হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা সভায় বক্তৃতা করেন। এতে ওলামা-মাশায়েখসহ অন্যান্য ধর্মের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও সরকারি কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে উপদেষ্টা পবার আল জামি’আহ আল সালাফিয়্যাহ মাদ্রাসা, সপুরার নওদাপাড়ায় অবস্থিত আল মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী মাদ্রাসা ও মাদানী মসজিদে জামিয়া উসমানিয়া হোছাইনাবাদ মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন এবং মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। পরে উপদেষ্টা হযরত শাহ মখদুম (রা.)-এর দরগাহ পরিদর্শন করেন এবং এর চলমান নির্মাণ কাজের খোঁজ-খবর নেন।