দেশের সব রাজনৈতিক দলই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতারা। তারা বলেন, এবারো সরকার পরিবর্তনের পরপরই দেশের ৪৮ জেলায় ২৭৮টি জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও হুমকির ঘটনা ঘটেছে। এসব পরিবারকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ারও হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানান হিন্দু মহাজোটের নেতারা।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে হিন্দু মাহজোটের নেতারা এসব অভিযোগ করেন। সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক ইতিহাসে ভয়াবহতম সাম্প্রদায়িক আক্রমণের প্রতিবাদে এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষীদের বিচার, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু কমিশনের দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জোটের নির্বাহী মহাসচিব ও মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে। সভাপতিত্ব করেন জোটের সভাপতি ড. প্রভাস চন্দ্র রায়। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি প্রভাস চন্দ্র মণ্ডল, নির্বাহী সভাপতি সুধাংশু চন্দ্র বিশ্বাস, প্রধান সমন্বয়কারী ড. সোনালী দাস, তপন হাওলাদার, সাংগঠনিক সম্পাদক আশীষ বাড়ই, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মৃদুলা বিশ্বাস, জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের প্রধান সমন্বয়কারী পঙ্কজ হালদার, সভাপতি প্রদীপ কান্তি দে, হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি অনুপম দাস প্রমুখ।
হামলার তথ্য তুলে ধরে মহাজোট নেতারা বলেন, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত কয়েকদিন ধরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জোরপূর্বক জমি দখল করে দেশত্যাগের হুমকি দেয়া হয়েছে, যেন একাত্তরের পুনরাবৃত্তি। কোনো মানুষ নয়, এগুলো সনাতন ধর্মের ওপর সুস্পষ্ট আঘাত। গত সোমবার পর্যন্ত দেশের ৪৮টি জেলায় ২৭৮টি হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা হয়েছে। বিগত সময়ে যারা সরকারে ছিল, সেসব রাজনৈতিক দলকে বারবার বলার পরও আমাদের কোনো দাবি পূরণ করা হয়নি। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- দেশজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহতম সাম্প্রদায়িক
আক্রমণের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা; সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও কমিশন করা; মন্দির ও বসত বাড়ি সরকারি খরচে পুনঃস্থাপন করা; দ্রুত বিচার ট্র্যইবুনালে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করে তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা; ২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সালের চলতি দিন পর্যন্ত সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা; আসন্ন দুর্গা পূজায় ৩ দিনের ছুটি ঘোষণা এবং সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা।
এক প্রশ্নের জবাবে পলাশ কান্তি দে বলেন, গত ২৪ বছরে ২৪টি দুর্গাপূজার আগেই যখন মানুষ দেখে প্রতিমা ভাঙচুর হচ্ছে, তখনই মানুষ বোঝে দুর্গাপূজা আসছে। আমরা বিগত ২৪ বছরে কারা প্রতিমা, মন্দির ভাঙচুর করেছে, আমরা চাই- সরকার এ রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করুক। প্রত্যেকটি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এ দেশের সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত। যখন যারাই এসেছে, তারাই হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন করেছে।
ড. প্রভাস চন্দ্র রায় বলেন, যে কোনো ধরনের সংকটে হিন্দু সম্প্রদায়ই ভুক্তভোগী হয়েছে। দেশে সরকার পরিবর্তন হলেই সর্বপ্রথম হিন্দুদের ওপর হামলা করা হয়। অতীতে তেমন আক্রমণ না থাকলেও ইদানীং আক্রমণ বেশি হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তা নিয়ে এ দেশে বেঁচে থাকতে চাই। এ দেশে আমরা জন্মগ্রহণ করেছি। এ দেশে আমাদেরও অধিকার রয়েছে।
হিন্দু মহাজোটের নেতারা আরো বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, হিন্দু মহাজোটের নাম ব্যবহার করে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বক্তব্য দিয়েছেন যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কোনো হামলা হয়নি। কিন্তু তিনি হিন্দু মহাজোট থেকে বহিষ্কৃত। তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই। হিন্দু মহাজোট রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ হিন্দু অধিকার আদায়ের সংগঠন। কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে খুশি করা বা কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হিন্দু মহাজোটের কাজ নয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হিন্দু মহাজোটের মূল আদর্শ। এ জন্য আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ ও পালন করে এমন ২৩টি ধর্মীয় ও জাতিগত সংগঠনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ২৩ দলীয় মোর্চাভুক্ত সদস্য।