সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ আজ কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেয়।
এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগ বিষয়টি নিয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছেন। অর্থাৎ, যেমন আছে, তেমন থাকবে।
কোটা বাতিল-সংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্রের ভিত্তিতে যে সব সার্কুলার দেয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে কোটা থাকছে না। আগামী ৭ আগষ্ট বিষয়টি শুনানির জন্য থাকবে।
হাইকোর্ট রায় পেলে নিয়মিত আপিল (সিপি) দায়ের করা হবে।এটর্নি জেনারেল বলেন, কোটা নিয়ে এখন আর আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই।
আদালতের যে কোন রায়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তাকে আদালতে এসেই বলতে হবে।শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর আনা আবেদনের শুনানি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত আজ আদেশ দেয়।
সেই সাথে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
আদালতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক।
রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আর হাইকোর্টে রায় প্রকাশের আগে সে রায় স্থগিত না করার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র এডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী।
এর আগে গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ শুনানি মূলতবির আদেশ দেয়।
ওইদিন রিটের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী না থাকায় এক আবেদনে সর্বোচ্চ আদালত ‘নট টুডে’ আদেশ দেয়। পাশাপাশি হাইকোর্ট রায় পেলে রাষ্ট্র পক্ষকে রেগুলার আপিল (সিপি) দায়ের করতে বলা হয়।
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট। ওই রায়ের ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে।
সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেড (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
ওই পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।
যেখানে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ, উপজাতি ৫ ও প্রতিবন্ধীর ১ শতাংশ কোটা বাতিল করা হয়।
এই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন।
সে রিটের শুনানি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে গত ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট।
এই রায়ের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রপক্ষ’ আবেদন করলে ৪ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করে দেয় চেম্বার জজ আদালত।
বিষয়টি শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করে গতকাল আদেশ দিয়েছিলো চেম্বার কোর্ট। ঢাবির দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে আনা আবেদন আমলে নিয়ে এ আদেশ দেয় চেম্বার কোর্ট। সে অনুযায়ী আজ শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষে আনা আবেদনের ওপর শুনানি হয়।