প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা কখনো পালিয়ে যায় না, বরং দলের একমাত্র লক্ষ্য দেশবাসীর জীবন ও জীবিকার উন্নয়ন।’ ‘আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না’—বিএনপির এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পালিয়ে যায়ওনি কখনো।’
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে গতকাল জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিরোধী দল—যদিও তারা সংসদে নেই—বলে, আমরা নাকি পালানোর কোনো পথ খুঁজে পাব না। তারা হুমকি দিচ্ছে। যিনি এ ভাষণ দিয়েছেন, তাকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পালিয়ে যায়নি কখনো।’
তিনি ১/১১ সরকারের সময় দেশে ফেরার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া আর রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে ২০০৭ সালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এখন তারা, যাদের দলের নেতা একজন দণ্ডিত, তারা বড় বড় কথা বলছে। একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামির অধীনে তারা কীভাবে এত বড় কথা বলতে পারে?’
তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হুমকি ও কঠোর বাধা সত্ত্বেও দেশে ফেরেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে সময় আমি বিদেশে ছিলাম। তারা চায়নি আমি দেশে ফিরি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাকে আসতে দেয়নি। সব আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসকে আমাকে নিয়ে ঢাকায় না নামতে বলা হয়েছিল। ঢাকায় তাদের অবতরণ করতে দেয়া হয়নি। এমন নির্দেশনা দেয়ার পরও আমি জোর করে বাংলাদেশে ফিরে আসি।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের হুমকি দেয়া হয়েছিল যে যারা বিমানবন্দরে যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা তাতে কর্ণপাত করেননি, বরং আমি যখন ঢাকায় অবতরণ করি তখন হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরে জড়ো হয়েছিল। আমি সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ফিরে এসেছি।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম সভায় বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আলোচনা শেষে শোকের মাস উপলক্ষে কেআইবিতে রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার মতো গণহত্যা চালিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রায় ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। অনেককে নির্যাতন করে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া এবং দখল করা হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা এমন অপকর্ম করেও টিকে থাকতে পারেনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং সহনশীলতা দেখাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা তাদের রাজনীতি করতে কোনো বাধা বা বিধিনিষেধ আরোপ করিনি। পুলিশের বাধার কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারতেন না। অথচ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় সেখানে পুলিশ ছিল না।’
বিএনপির প্রচার-প্রচারণা ও আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হলো এত টাকা তারা পাচ্ছে কোথা থেকে? সব চুরির টাকা কি এখন বের হচ্ছে? প্রতি মিটিংয়ে কত টাকা খরচ হচ্ছে?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মা-বাবা ও ভাইকে হারিয়ে এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয় নিয়ে এসেছি।’ বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যাতে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য তিনি আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠনকে একইভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন।