পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ ১৩টি পশ্চিমা দেশের কূনীতিককে ডেকে পাঠিয়ে ‘কূটনৈতিক নিয়ম লঙ্ঘন’ করার জন্য ঢাকার অসন্তোষের কথা জানিয়েছে। কারণ, তারা সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আশরাফুল আলম (হিরো আলম)-কে কেন্দ্র করে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে গণমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেসব রাষ্ট্রদূত গত ১৭ জুলাই ঢাকা ১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সম্পর্কিত একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনায় কূটনৈতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে গণমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন আমরা তাদের ডেকেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে তাদের আচরণের জন্য আমরা আমাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছি।’
যদিও আলম বলেন, “গত ২০ জুলাই ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীকে হিরো আলম সম্পর্কিত টুইটের জন্য ‘তলব’ করার ঘটনার বিপরীতে আমরা এটিকে ‘তলব’ বলছি না, বাংলাদেশের অসন্তোষ প্রকাশের জন্য আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।”
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকসহ পশ্চিমা কূটনীতিকরা বিকাল ৩টার কিছু আগে একে একে স্টেট গেস্ট হাউস পদ্মায় প্রবেশ করেন এবং ৫০ মিনিট স্থায়ী বৈঠকটি শেষ হয় বিকাল ৩.৫০ মিনিটে।
দূতদের সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে নিকটবর্তী ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আলম।
বিদেশী কূটনীতিকরা কীভাবে ঢাকার অসন্তোষের প্রতিক্রিয়া জানালেন? জানতে চাইলে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তারা তাদের যৌথ বিবৃতিকে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করার প্রচেষ্টা হিসাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন এবং তারা অন্য কোনো উদ্দেশ্যের দ্বারা পরিচালিত হয়নি।
আলমের মতে, আলাপচারিতার সময় চার-পাঁচজন রাষ্ট্রদূত কথা বলেন। তারা বলেন, তাদের বক্তব্য বাংলাদেশের সাথে তাদের অব্যাহত সম্পৃক্ততার অংশ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা দিয়ে সারাদিনের শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।
তিনি বলেন ‘আমরা তাদের যুক্তির পাল্টা বলেছি, ভিয়েনা কনভেনশনে (কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ে) স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে কোনও রাষ্ট্রদূতের যোগাযোগের প্রথম পয়েন্টটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হওয়া উচিত।’
আলম বলেন, ‘আমরা সর্বদা মিডিয়ার সাথে তাদের যোগাযোগের প্রশংসা করি, তবে এ ধরনের যে কোন বিষয়ে কোন মন্তব্য করার আগে তাদের প্রথমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।’
আলমের মতে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকার লিখিত প্রতিক্রিয়ার কপি রাষ্ট্রদূতদের হন্তান্তর করেছে, তবে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ১৩টি দেশের রাজধানীতে এর কপি পৌঁছে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে ঢাকার প্রতিক্রিয়া সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে জটিল করে তুলতে পারে কিনা জানতে চাইলে আলম নেতিবাচক জবাব দেন।
তিনি বলেন, দেশগুলোর মধ্যে জটিল বা উৎতপ্ত সমস্যা থাকলেও কার্যকর কূটনৈতিক সম্পর্কের অগ্রগতি হতে পারে যা প্রতিবেশীদের মধ্যেও দেখা যায় এবং “কোনভাবেই এই সমস্যাটি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ককে ব্যাহত করবে না। বাংলাদেশের প্রতিটি (এই ১৩টি) দেশের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে, আমাদের ব্যবসা রয়েছে, তাদের সাথে জনগণের যোগাযোগ রয়েছে এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক পর্যায়ে যোগাযোগ রয়েছে। এই সব বিষয় তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আলম অবশ্য বলেন, বিভিন্ন মহল বা গোষ্ঠী নির্বাচনের আগে পরিস্থিতিকে জটিল করার চেষ্টা করতে পারে যার ফলশ্রুতি কূটনীতিকদের যৌথ বিবৃতিতে হতে পারে।
তিনি বলেন, কিছু লোকের অতি উৎসাহের কারণে এটা ঘটতে পারে যা আমরা ধরে নিচ্ছি জাতিসংঘের স্থানীয় প্রতিনিধির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
আলম কোনো বিশদ বিবরণ না দিয়ে বলেন, অতীতে অন্তত একটি দৃষ্টান্ত রয়েছে, যেখানে কোনো একজন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে তার নিজ দেশের রাজধানীর অবস্থান প্রতিফলিত হয়নি।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি একটি বিরল ঘটনা যখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো প্রতিবাদ জানাতে একযোগে এত বেশি সংখ্যক বিদেশী রাষ্ট্রদূতকে ডেকেছিল।
তবে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যখন কোন বিষয়ে ঢাকার অসন্তোষ প্রকাশের জন্য কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা বা ডাকা হয়েছে।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১৩ রাষ্ট্রদূত যৌথ বিবৃতিতে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার পূর্ণ তদন্ত ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছিল, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমরা অপরাধীদের ব্যাপারে পূর্ণ তদন্ত ও জবাবদিহিতার আহ্বান জানাই। আসন্ন নির্বাচনের সাথে জড়িত প্রত্যেকেরই নিশ্চিত হওয়া উচিত যে তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বচন নিশ্চিত করবে।’
বিবৃতি অন্যান্য স্বাক্ষরকারীর মধ্যে রয়েছে কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতগণ।