সন্তানদের হত্যার অভিযোগে ২০ বছর কারাভোগের পর প্রমাণ হলো যে, এই হত্যার সাথে জড়িতই ছিলেন না অভিযুক্ত মা। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানের পর ওই নারীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়েছেন প্রদেশের গর্ভনর। এ ঘটনা পর দেশটির আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
যে কোনো থ্রিলার সিনেমাকেও হার মানাবে ক্যাথলিন ফোলবিগ নামের অস্ট্রেলিয়ান এ নারীর জীবনের কাহিনী। নিজের চার সন্তানকে হত্যার দায়ে তাকে কারাভোগ করতে হয়েছে ২০ বছর! নাটকীয়তা এখানেই শেষ নয়। দীর্ঘ দুই দশক পর মামাল্য আসে এক আকস্মিক মোড়। যে সন্তানদের হত্যার দায়ে কারাভোগে জীবন পার করলেন ক্যাথলিন, দেখা গেলো সে ঘটনার সাথে তিনি জড়িতই ছিলেন না!
সালটা ২০০৩। অস্ট্রেলিয়ার টক অব দ্য টাউন হয়ে ওঠে ক্যাথলিনের সিরিয়াল কিলিংয়ের ঘটনা। অভিযোগ ওঠে, ১৯৮৯ সাল থেকে ৯৯ সালের মধ্যে নিজের চার সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন তিনি। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় সে সময় তাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
রায়ের পর কারাগারের অন্ধকারেই কেটে গেছে ক্যাথলিনের ২০টি বছর। সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছিলো ওই চার শিশুর। বিরল জেনেটিক মিউটেশনই ছিল তাদের মৃত্যুর কারণ। এরপরই নিউ সাউল ওয়েলসের গভর্নর নিঃশর্ত ক্ষমা করেন ওই ক্যাথরিনকে।
ক্যাথলিনের আইনজীবী রানে রেগো বলেন, ক্যাথলিন একটি, দুটি নয়, তার চারটি সন্তানকেই হারিয়েছে। ২০ বছর জেল খেটেছে বিনা অপরাধে। এই সিস্টেম তাকে প্রতিটি পদক্ষেপে ভুল প্রমাণ করেছে। তার সন্তানদের কেনো মৃত্যু হলো, এ বিষয়টি বোঝার চেষ্টা না করে, আমরা তাকে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে খারাপ নারী হিসেবে আখ্যায়িত করলাম। ক্যাথলিনের যা যা ভোগ করেছে, তা আমরা নিজেদের জীবনে ভাবতেও পারি না। তাই তার আইনি অধিকার নিশ্চিতে এখন সব রকম সহায়তা দেবো আমরা।
মুক্তির পর সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন ক্যাথলিন ফোলবিগ। তিনি বলেন, কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সবার সহায়তা ছাড়া এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠতে পারতাম না। আজ সত্যের জয় হয়েছে। সত্যি বলতে, আমি ওদের প্রচণ্ড ভালোবাসি, ওদের কথা ভেবে কষ্ট পাই।
প্রসঙ্গত, নিঃশর্ত ক্ষমা পেলেও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে এখনও আইনি লড়াই বাকি রয়েছেন ক্যাথলিন ফোলবিগের। ফৌজদারি আদালতে আপিল করে পেরোতে হবে আইনের জটিল জাল।